নারী ও পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক জীবনের একটি অংশ। প্রজনন বাদেও শারীরিক সম্পর্কের উদ্দেশ্য হতে পারে আনন্দ বা ঘনিষ্ঠতা। শারীরিক সম্পর্কের পর ভেজাইনাল ব্লিডিং ভীতিকর হতে পারে তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক। গড়ে প্রায় ৯% ঋতুমতী নারীদের সঙ্গমের পর রক্তক্ষরণ হয়।
আবার, ৬৩% postmenopausal নারীদের মধ্যে সঙ্গম এর সময় ভেজাইনাল শুষ্কতা থেকে রক্তক্ষরণ দেখা যায়। Postmenopausal বলতে বুঝায় এমন নারী যাদের প্রায় ১ বছর যাবত ঋতুস্রাব হয়নি। ভেজাইনাল ড্রাইনেস এর কারণ ভেজাইনার দেয়ালগুলোতে আদ্রতার পাতলা স্তর থাকে, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হরমোন উৎপাদন এর মাত্রায় তারতম্য দেখা দেয়। এর ফলে ভেজাইনার দেওয়ালগুলো পাতলা হয়ে যায় এবং আদ্রতাও কম থাকে। ভেজাইনাল ড্রাইনেস এর জন্য সঙ্গমের সময় জ্বালাপোড়া, রক্তক্ষরণ হতে পারে।
অন্যদিকে, প্রথমবার শারীরিক সম্পর্ক-র পর সাধারণ হাইমেন ছিড়ে যাওয়া ফলে রক্তপাত হতে পারে। হাইমেন বা সতীচ্ছদ হচ্ছে এক ধরনের পর্দা যা ভেজাইনার সামনে অবস্থান করে এবং ভেজাইনা পুরোপুরি বা আংশিক ঢেকে রাখে৷ একজন ১৬ বছর বয়সী নারীর হাইমেন ছিড়ে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা একজন ২৫ বছর বয়সী নারীর তুলনায় বেশি। মাইনর ব্লিডিং সাধারণত ১/২ দিন স্থায়ী হয়। অল্প পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হলে তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
শারীরিক সম্পর্কের পর রক্তক্ষরণ হওয়ার কিছু কারণঃ-
সঙ্গম এর পর রক্তক্ষরণ হওয়াকে বলে postcoital bleeding। এটি প্রায় সব বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে হতে পারে। আনুমানিক ০.৭ থেকে ৯ শতাংশ নারীদের সঙ্গম এর পর রক্তক্ষরণ হতে পারে। কমবয়সী যেসব মেয়েদের মেনোপজ হয়নি বা যাদের রজচক্র বহাল আছে তাদের ক্ষেত্রে ব্লিডিং এর উৎস হতে পারে সারভিক্স বা জরায়ুর গ্রীবা। আর যাদের মেনোপজ হয়েছে বা রজচক্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ব্লিডিং এর উৎস বিভিন্ন৷ যেমনঃ সারভিক্স, জরায়ু, ইউরেথ্রা, লেবিয়া।
ভেজাইনার পর্দা ছিড়ে গেলে বা খুব বেশি বল প্রয়োগ করে অ্যাগ্রেসিভলি সঙ্গম করলে ভেজাইনার কোনো অংশ ছিলে যাওয়া বা ছোটখাটো ক্ষত হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তপাত হতে পারে। এর জন্য মূলত দায়ী ভেজাইনাল ড্রাইনেস, মেনোপজ। অনিয়মিত ভেজাইনাল ব্লিডিং এর সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হতে পারে cervical বা vaginal cancer ও uterine cancer।
শারীরিক সম্পর্কের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অ্যানিমিয়া বা আয়রন ঘাটতি হতে পারে কারণ রক্তপাত এর সাথে লোহিত রক্তকণিকাও হ্রাস পায়। অ্যানিমিয়া এর ফলে অবসাদ, দুর্বলতা, মাথা ঘুরানো, মাথা ব্যথা হতে পারে। এমন হলে ডাক্তাররা সাধারণত আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার পরামর্শ দেন।
শারীরিক সম্পর্ক-র পর রক্তক্ষরণ হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে ট্রমা বা মানসিক আঘাত। অনেকেই শারীরিক সম্পর্কের সময় ভয় পান বা অনিচ্ছা থেকে মানসিক চাপ অনুভূত হয়। শারীরিক সম্পর্কের সময় সঙ্গিনীর অসম্মতি বা অনিচ্ছা থাকলে ভেজাইনা শিথিল থাকে না। তখন বল প্রয়োগ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার, ভেজাইনাতে আদ্রতা থাকলে শারীরিক সম্পর্কের সময় ঘর্ষণ কম অনুভূত হয় কিন্তু ট্রমাতে থাকা একজন নারীর ক্ষেত্রে হরমোনসহ নানা কারণে ভেজাইনা আদ্র থাকেনা। তখন সঙ্গম করলে ভেজাইনার টিস্যুতে ইরিটেশন হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়।
সম্মতি নিয়ে সঙ্গম এর পরও ০.৬% ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ভেজাইনাল নালীতে রক্তের অনেক ধমনী ও শিরা থাকে। এদের যেকোন একটিতেও গুরুতর আঘাত বা ক্ষত এর ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় এবং সময়মতো ডাক্তারের স্মরণাপন্ন না হলে মানুষ মারা যেতে পারে। তবে এই ধরনের ঘটনা বিরল। সঙ্গমের সময় অনেক ক্ষেত্রে ড্রাগস গ্রহণ করলেও মৃত্যু হতে পারে, যেমনঃ কোকেইন বা ভায়াগ্রা। তবে সঙ্গমের সময় শুধু নারীদের নয়, পুরুষদেরও মৃত্যু হতে পারে। তা নিয়ে না হয় অন্য একদিন বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
রেফারেন্স:
১. https://www.healthline.com/health/womens-health/bleeding-after-sex
২. https://m.timesofindia.com/city/ranchi/Minor-dies-during-sex-due-to-excessive-bleeding-doctors-call-injuries-rare/articleshow/20014740.cms
৩. https://www.buoyhealth.com/learn/bleeding-after-sex
৪. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Death_during_consensual_sex