পৃথিবী গত ৩৩,০০০ বছর ধরে তেজস্ক্রিয় ধূলিমেঘের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণ করছে, যা মূলত সুপারনোভা বিস্ফোরণে উদ্ভুত। এটির প্রমাণ আমরা পাই গভীর সমুদ্রে।”-সাম্প্রতিক একটি রিসার্চে এই তথ্যগুলো উঠে এসেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ANU) হেভি আয়ন এক্সিলারেটর ফ্যাসিলিটির (এইচআইএএফ) গবেষকরা ৩৩,০০০ বছর আগের দুটি ভিন্ন জায়গা থেকে গভীর সমুদ্রের পললগুলিতে আয়রন-60 এর চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন।
এএনইউর পরমাণু পদার্থবিজ্ঞানী লিড লেখক প্রফেসর অ্যান্টন ওয়ালনার বলেছেন, “এই মেঘগুলি পূর্বের সুপারনোভা বিস্ফোরণ অর্থাৎ তারার একটি শক্তিশালী এবং প্রচণ্ড উজ্জ্বল বিস্ফোরণের অবশেষ হতে পারে”।
আবিষ্কারটি সৌরজগতের চারপাশে কী রয়েছে সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে পারে- তবে এটি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধও বটে।
আসুন একটু গভীরে যাওয়া যাক।
আয়রন-60 আসলে কী ?
এটি সুপারনোভার অস্তিত্ব সম্পর্কিত একটি প্রমাণ। কারণ, আইসোটোপ আয়রন-60 কেবল তখনই তৈরি হয় যখন নক্ষত্রগুলি সুপারনোভা বিস্ফোরণে মারা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে সাধারণ উপাদান আয়রনের চেয়ে এটিতে আরও চারটি নিউট্রন বেশি রয়েছে।
এটি অবশ্যই সৌরজগতের ওপার থেকে পৃথিবীতে এসে পৌঁছেছে।
2.6 মিলিয়ন বছর অর্ধায়ুর একটি আয়রন আইসোটোপ Fe-60, 15 মিলিয়ন বছরের মধ্যে তেজস্ক্রিয় বিকিরিণের ফলে ক্ষয় হয়ে যায়। যেহেতু পৃথিবীর বয়স 4.6 বিলিয়ন বছর, তার মানে পৃথিবীতে পাওয়া যে কোনও আয়রন-60 অবশ্যই আমাদের মহাসাগরের তলদেশে শেষ হওয়ার আগে সুপারনোভার মধ্য দিয়ে এখানে পৌঁছেছিল।
গবেষকরা এর আগে প্রায় 2.6 মিলিয়ন বছর আগের আয়রন-60 এর সন্ধান পেয়েছিলেন।
সুপারনোভা হচ্ছে একটি বিস্ফোরিত তারা। একটি সুপারজায়ান্ট তারকার জীবনচক্রের শেষে, তার জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। ফলে চাপ কমে যায় এবং এটি এত দ্রুত ধসে যায় যে, তারার বাইরের অংশটি বিস্ফোরিত হয়ে একটি বিশাল-আলোকিত ঘটনা ঘটায়! যা পুরো গ্যালাক্সির চেয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল হতে পারে।
এই ধরণের সুপারনোভা বিস্ফোরণ হলো মহাবিশ্বের ভারী উপাদানগুলির উৎস। এবং এরপরেও তাদের অবশিষ্টাংশ গুলো থাকে, যেমন ক্র্যাব নেবুলা এবং ক্যাসিওপিয়া-A।
বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান যখন বলেছিলেন যে “আমরা সকলেই স্টার স্টাফ দিয়ে তৈরি”, তখন তিনি তারকাদের মধ্যে তৈরি কার্বন, নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন এবং মৃত তারার অবশিষ্টাংশের ভারী উপাদানগুলির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে এটিকে আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে বিজ্ঞানী কার্লের মতে “আমরা সকলেই পারমাণবিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি হয়েছি।”
গবেষকরা বলছেন, এই কালপ্রিট মূলত লোকাল ইন্টেস্টেলার ক্লাউড (এলআইসি) হতে পারে, যা “লোকাল ফ্লাফ” নামে পরিচিত। যার উৎস অস্পষ্ট।
Local Fluff হচ্ছে ৩০ আলোক-বর্ষ-প্রশস্ত ধূলিকণা মেঘ, যা বর্তমানে সৌরজগতের মধ্য দিয়ে চলছে এবং প্রকৃতপক্ষে প্রায় চলে গেছে। এটি হাইড্রোজেন গ্যাসের চেয়ে সামান্য উচ্চ ঘনত্বের। এ ধরণের অণু মহাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
পরিভ্রমণকালে পৃথিবী সম্ভবত এই তেজস্ক্রিয় স্টারডাস্ট “Fluff” থেকে আয়রন-60 এর কণা তুলে নিয়েছে। গত বছর অ্যান্টার্কটিকায় গবেষকরা আয়রন-60 সমৃদ্ধ “স্টারডাস্ট” আবিষ্কার করেছিলেন।
যাইহোক, এই নতুন গবেষণা যা ইঙ্গিত করেছে তা হলো, এখানে “Local Fluff” এর মধ্যে থাকা আয়রন-60 ছাড়াও সৌরজগতে আরও আয়রন-60 এর প্রমাণ রয়েছে।
এই গবেষণা দুটি প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়..
১। যদি “Local Fluff” মেঘটি কোনও সুপারনোভা দ্বারা গঠিত না হয় তবে কোথা থেকে এসেছিল?
২। আয়রন -60 আসলে কি মহাশূন্যে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে?
আয়রন-60 শূন্যে ভাসমান ধুলিকনার মাঝে অবস্থানরত আছে। তাই সম্ভবত এটি অনেক পুরনো সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে এসেছে।
বিজ্ঞানী ওয়ালনার বলেছেন, “সর্বোপরি, এটা মনে হচ্ছে যে, এই ভারীতম উপাদানগুলি স্ট্যান্ডার্ড সুপারনোভাতে তৈরি হতে পারে না। এটির জন্য দুটি নিউট্রন তারা মিশ্রিত করার মতো বিরল এবং আরও বিস্ফোরক ইভেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।”
আরিফা জান্নাত ইভা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
4
+1
2
+1
1
+1
4
+1
1
+1
1
+1
3