শুনলে অবাক লাগবে, কেউ কেউ হয়তো হেসেই উড়িয়ে দিতে চাইবেন কিন্তু কথাটা সঙ্গত কারণে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। “১০ মিলিয়ন টন এর বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতি বছর সমুদ্রে যুক্ত হয়।” এখন এই ভাসমান প্লাস্টিক হয়তো অনেকেরই চোখে লেগে থাকবে, আর এজন্য Blue Planet Movement -কে ধন্যবাদ, এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিক অপসারণ করা এবং ব্যবহার কমানো গেছে কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা যে পরিমাণ বর্জ্য সাগরে মেশে তার মাত্র ১%।
আগে মনে করা হত, বাকি ৯৯% গভীর সমুদ্রের কোন এক কোণায় যেয়ে জমা হয়, কিন্তু বর্তমানে এই ধারণার অবসান ঘটেছে। গত সপ্তাহে সাইন্স জার্নালে প্রকশিত একটি রিসার্চ পেপারে দেখানো হয়েছে কিভাবে গভীর সমুদ্রের স্রোত কনভেয়ার বেল্টের মত কাজ করে। এই স্রোত নিচে জমে থাকা প্লাস্টিক ফ্র্যাগমেন্ট বা কণিকা এবং ফাইবারকে সারা সমুদ্র পৃষ্ঠে ছড়িয়ে দেয় দেয়।
গবেষণাটি পরিচালিত করেছে ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টার, ইউনিভার্সিটি অব ব্রীমেন, আইএফআরইএমইআর (IFREMER) এবং ডুরহাম ইউনিভার্সিটি।
এই স্রোত প্রচুর পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক সমৃদ্ধ তলানিকে সমুদ্রের উপরের স্তরে পাঠিয়ে দেয় এবং যে সকল স্রোত থেকে এই তলানি উঠে আসছে সেসব জায়গাগুলির নাম দেওয়া হয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক হটস্পট। দেখা গেছে, এই হটস্পট থাকে সমুদ্রের সেখানে, যেখানে ময়লাগুলো গভীর সাগরের ঢেউ এর টানে গিয়ে জমা হয়।
এপ্রসঙ্গে ড. ইয়ান কেইন বলেন, “প্রায় সবাই সমুদ্রের ময়লার ভাগাড় এর নাম শুনে থাকবেন, কিন্তু আমরা গভীর সমুদ্রে এ উচ্চ ঘনমাত্রার মাইক্রোপ্লাস্টিক দেখে হতবাক হয়ে গেছি। আমরা দেখেছি এই মাইক্রোপ্লাস্টিক সব জায়গায় সমান ভাবে ছড়ানো নয় বরং এগুলো শক্তিশালি স্রোত দিয়ে একজায়গায় জমা হচ্ছে। এই প্লাস্টিকের ভেতর আছে বাসাবাড়ি এবং টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত ফাইবার যা ফিল্টার দিয়ে আটকানো যায় না এবং পরে নদী এবং সমুদ্রের পানির সাথে মেশে।”
তিনি আরো বলেন, “সমুদ্রে এগুলো হয় নিচে গিয়ে জমা হয় অথবা স্রোত এবং ঢেউ এর মাধ্যমে সমুদ্রের গভীরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবাহিত হয়ে গভীরতর সমুদ্রের ক্যানিয়ন পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু এই গভীর সমুদ্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক তলাতে থাকা পলিমাটির সাথে মিশ্রিত হয়।”
“আবার এই গভীর সমুদ্রের স্রোত প্রচুর অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানি এবং পুষ্টি পদার্থ বহন করে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক হটস্পটগুলি পুষ্টি সরবারহ এর কাজেও জড়িত। ফলে, সামুদ্রিক খাদ্যচক্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অনুপ্রবেশ আরো সহজ হচ্ছে।”
দলটি টাইরেনিয়ান (Tyrrhenian) সাগর, যা ভূমধ্যসাগরের অংশ, সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। এখানে উল্লেখ্য, এই নমুনা গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে নেওয়া হয়। ল্যাবরেটরিতে এই নমুনার তলানি থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক আলাদা করা হয়, মাইক্রোস্কোপ এর নিচে গোণা হয় এবং ইনফ্রা রেড স্পেক্ট্রোস্কোপি দিয়ে প্লাস্টিক টাইপ বের করা হয়। বিজ্ঞানীরা এভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ছড়ানো এবং পরিবহণ এ সমুদ্র তলের স্রোতের ভূমিকা দেখতে পারেন।
বিজ্ঞানীরা বলেন, “গভীর সমুদ্রের স্রোত বিশ্লেষণ আমাদের মাইক্রোপ্লাস্টিক এর গতিপথ এবং এর সম্ভাব্য অবস্থান জানাতে সাহায্য করবে। ফলে আমরা সহজেই যেকোনো ব্যবস্থা নিতে সমর্থ হব। আবার এই গবেষণা মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে যে পলিসি আছে সেটা পুনঃর্বিবেচনা করতে এবং সমুদ্রের খাদ্যচক্রে এর প্রভাব হ্রাস করতে ভূমিকা রাখবে। কারন সমুদ্রের তলানি তে বালু কাদা প্রভৃতির সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিক একটি নতুন উপাদান যা কোনভাবে এড়ানো যাবে না! ”
ঋভু / নিজস্ব প্রতিবেদক