Young Sheldon টিভি সিরিজটার সাথে আমরা যারা পরিচিত বা দেখেছি তারা জানি প্রথম এপিসোডে একটা জনপ্রিয় অংশ ছিল শেলডন এবং তার জমজ বোন মিসি এর মধ্যে শুক্রাশয় নিয়ে এই কথোপকথন,
মিসি: When we get home, I’m gonna kick your little balls.
শেলডন: You can’t. They haven’t descended yet.
৯ বছর বয়সী শেলডন কেন এই কথা বললো, বিষয়টা আসলে কেমন?
স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে টেস্টিস বা শুক্রাশয় নেমে আসার ব্যাপারে। আসলেই কি শুক্রাশয় অন্য কোনো স্থান থেকে স্ক্রোটামে (দুই উরুর মাঝে শুক্রাশয় থাকার থলি) নেমে আসে?
টেস্টিস বা শুক্রাশয় হলো পুরুষদের প্রধান প্রজনন অঙ্গ। পূর্ণবয়স্ক স্বাভাবিক একজন পুরুষে দুইটি সচল শুক্রাশয় থাকে যা স্ক্রোটাম নামক থলির ভেতর যা প্রায় বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু করে সারা জীবন শুক্রাণু উৎপাদন করতে থাকে।
শুক্রাশয় প্রকৃতপক্ষে তৈরি হয় মানুষের উদর গহ্বরে। শুক্রাশয় ভ্রুণাবস্থায় যখন গঠিত হয় তখন যদিও উদর গহ্বরে অবস্থান করে, গর্ভাবস্থায় এটি ইঙ্গুইনাল ক্যানেল হয়ে স্ক্রোটামের দিকে আসতে থাকে এবং জন্মের সময় অথবা জন্মের ঠিক পরপর এটি স্ক্রোটামে চলে আসে।
এই ঘটনা ঘটার পেছনে বেশ কিছু ফ্যাক্টর আছে, যেমন,
- দেহ প্রাচীরের বৃদ্ধি ও রূপান্তর
- উদর গহ্বরের অভ্যন্তরে চাপ বৃদ্ধি
- শুক্রাশয় নিঃসৃত হরমোন এবং মায়ের দেহ থেকে আসা গোনাডোট্রপিন হরমোন
- শুক্রাশয় এবং স্ক্রোটামের নিম্ন প্রান্তের সাথে সংযুক্ত একটি ব্যান্ড এর মত টিস্যুর সংকোচন
- ক্যালসিটোনিন জিন রিলেটেড পেপটাইড (সিজিআরপি) নামে একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যেটি জেনিটোফিমোরাল নার্ভ থেকে আসে এবং গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাস থেকে শুরু করে জন্মের আগ পর্যন্ত এসব ফ্যাক্টর এর সম্মিলিত প্রভাবে ধীরে ধীরে শুক্রাশয় তার নির্দিষ্ট পথে স্ক্রোটাম এর দিকে আসতে থাকে। তাই সুস্থ মানুষে জন্মের সময় আমরা স্ক্রোটামে শুক্রাশয় পেয়ে থাকি।
গর্ভাবস্থায় শুক্রাশয়ের অবস্থান প্রকৃতপক্ষে কখন কোথায় হওয়া উচিত তা হলো:
চতুর্থ মাস – ইলিয়াক ফসা
সপ্তম মাস – ডিপ ইংগুইনাল রিং
অষ্টম মাস – ইংগুইনাল ক্যানেল
জন্মের পর – স্ক্রোটাম
তবে যদি কোনো কারণে শুক্রাশয়ের গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়, তবে তা শুক্রাশয় পর্যন্ত নাও আসতে পারে। এই সমস্যাকে বলা হয় ক্রিপ্টর্কিডিজম।
এই সমস্যায় শুক্রাশয় তার গতিপথের নিম্নলিখিত স্থানগুলোতে পাওয়া যেতে পারে:
- উদর গহ্বরে
- ডিপ ইঙ্গুইনাল রিং এ
- ইঙ্গুইনাল ক্যানেলে
- সুপারফিশিয়াল ইঙ্গুইনাল রিং এ
- স্ক্রোটামের উপরের অংশে
ক্রিপ্টর্কিডিজম এর ক্ষেত্রে দুইটি প্রধান সমস্যা দেখা যায়,
- স্বয়ংসম্পূর্ণ শুক্রাণু উৎপাদন না হওয়া। সুস্থ, সচল শুক্রাণু উৎপাদনে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার চেয়ে দেহের ভেতর তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে।
- ম্যালিগন্যান্সি বা ক্যান্সার হতে পারে।
মোট কথা হচ্ছে, শুক্রাশয় স্ক্রোটাম ব্যতীত অন্য কোথাও অবস্থান করলে একজন পুরুষ তার প্রজনন সক্ষমতা হারাবে। তার উপর সেখান থেকে যদি ক্যান্সার হয়ে যায় তাহলে অন্যান্য সমস্যা তো আছেই।
তাই কোনো কারণে শুক্রাশয় যদি স্ক্রোটামে না পৌঁছায়, বিষয়টি মনিটরিং করা প্রয়োজন এবং কিশোর বয়সেই একে সার্জারির মাধ্যমে স্ক্রোটামে স্থানান্তর করতে হবে।
অনেকে অনেক সময় কাছাকাছি আরেকটি সমস্যা একটোপিক টেস্টিস এবং ক্রিপ্টর্কিডিজম একই বলে মনে করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা ভিন্ন।
ক্রিপ্টর্কিডিজম এর ক্ষেত্রে শুক্রাশয় তার প্রকৃত গতিপথের কোনো এক স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয় মাত্র। কিন্তু একটোপিক টেস্টিস এর ক্ষেত্রে আসলে প্রকৃত পথ থেকে শুক্রাশয় সরে গিয়ে অন্য কোনো পথে চলে যায়, যার কারণে স্ক্রোটামে পৌঁছাতে পারে না।
একটোপিক টেস্টিস এর ক্ষেত্রে শুক্রাশয় পাওয়ার সম্ভাব্য কয়েকটি স্থান:
- উদর গহ্বরের সামনের প্রাচীরের নিম্নাংশে
- নাভির নিচে পিউবিস অস্থির কাছাকাছি
- স্ক্রোটাম এর পিছনে
- উরুতে
এর ক্ষেত্রেও কিশোর বয়সে সার্জারির মাধ্যমে শুক্রাশয় স্ক্রোটামে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
ছেলে সন্তান জন্মের পর মা বাবা এবং পরিবারের লোকজন যদি এই বিষয়টি খেয়াল রাখেন তাহলে সমস্যাটি যথাযথভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব, হোক সেটা ক্রিপ্টর্কিডিজম, অথবা একটোপিক টেস্টিস।
নাদিয়া ইসলাম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ স্নেলস ক্লিনিক্যাল অ্যানাটমি বাই রিজিয়নস, ভিশরাম সিং’স রিজিওনাল অ্যানাটমি, দত্ত অ্যানাটমি অ্যাবডোমেন