শিশুদের খেলনা-ও হতে পারে বিষাক্ত!
-কথাটি আপনার কাছে হয়তো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। কারণ, শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় বস্তু হচ্ছে তার খেলনা। কিন্তু সেই খেলনা ও কখনো কখনো হয়ে উঠতে পারে শিশুর জন্য ক্ষতিকর। কথাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি!
সম্প্রতি জাতিসংঘ পরিবেশ প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, শিশুদের খেলনায় ২৫% ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। শিশুদের খেলনা গুলোকে নমনীয় এবং আর্কষণীয় করতে মূলত এইসব বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিকের পণ্যগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে প্লাস্টিকের খেলনা শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর তাই নিয়ে গবেষণা করেন। একটি বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যায়, প্লাস্টিকের খেলনা গুলোতে উপস্থিত রাসায়নিক পদার্থ শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
একদল গবেষক প্লাস্টিকের প্রোডাক্ট গুলোতে উপস্থিত রাসায়নিক পদার্থ কিভাবে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষকরা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের একটি তালিকা তৈরি করেন। তালিকাভুক্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গুলোর মধ্যে ১oo টির ও বেশি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনাগুলোতে উপস্থিত।
ডেনমার্ক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রধান গবেষক পিটার ফ্যান্টকে বলেন, ৪১৯ টি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা শিশুদের খেলনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর মাঝে এমন ১২৬ টি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং সেগুলো শিশুদের ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারণ। ক্ষতিকর ১২৬ টি উপাদানের মধ্যে ৩১ টি প্লাস্টিসাইজার, ১৮ টি শিখা প্রতিরোধী এবং ৭ টি সুগন্ধযুক্ত উপাদান রয়েছে।
শিশুদের প্লাস্টিকের খেলনা গুলোকে দীর্ঘমেয়াদী, আর্কষণীয় এবং নমনীয় করতে প্যাথালেটস নামক যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় তা শিশুর জন্য খুবই মারাত্নক। শিশুরা খেলার সময় তাদের খেলনাগুলো মুখে নিয়ে থাকে, তখন খেলনায় উপস্থিত রাসায়নিক পদার্থ গুলো শিশুদের মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাই শৈশবকালেই অনেক শিশুর মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ দেখা দেয়।
গবেষকরা বলেন, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেন শিশুদের খেলনায় ব্যবহৃত না হয় সেই জন্য বিশ্বের অনেক দেশে আইন প্রণয়ন করা হয় এবং প্যাথালেটস, ব্রোমিনেটেড শিখা এবং ভারী ধাতু খেলনা তৈরিতে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
গবেষকরা পরামর্শ দেন, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের বিকল্প পদার্থ (যেমন, কাঠ, সুতা ইত্যাদি) শিশুদের খেলনা তৈরিতে ব্যবহার করা উচিত, যাতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।
আপনি খেয়াল করলে নিশ্চয়ই দেখবেন, বেশিরভাগ প্লাস্টিকের খেলনা গুলোতে কোনো ধরনের লেবেলিং করা হয় না। তাই কি কি রাসায়নিক পদার্থ খেলনা গুলোতে রয়েছে এবং সেইগুলো শিশুর জন্য ক্ষতিকর কি না তা অনেক অভিভাবকের কাছেই অজানা।
গবেষকরা শিশুদের খেলনায় উপস্থিত রাসায়নিক পদার্থ এবং শিশুদের খেলনা ব্যবহারের নির্দশন গুলোর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করার জন্য একটি পরিসংখ্যান তৈরি করেন। যেমন- একটি শিশু কতক্ষণ খেলনা নিয়ে খেলে, খেলনাগুলো খেলার সময় মুখে নেয় কি না এবং তার বাসায় মোট কতটি খেলনা রয়েছে, ইত্যাদি।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, শক্ত প্লাস্টিকের খেলনাগুলোর চেয়ে নরম প্লাস্টিকের খেলনাগুলো বেশি ক্ষতিকর।
সুতরাং, আপনি যদি একজন অভিভাবক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে শিশুর হাতে খেলনা তুলে দেওয়ার আগে তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ sdg.iisd.org, www.news24.com, Science Direct