বিশ্বে প্রথমবারের মতো ল্যাবে তৈরি করা রক্ত মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে- দাবী UK রিসার্চারদের। যদিও ট্রায়াল হিসেবে দুইজনের শরীরে অল্প (কয়েক চামচ) পরিমানে প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা প্রকাশিত হবার পর থেকে সবার মাঝে ঘুরে ফিরে আসছে বেশ কিছু প্রশ্ন: কৃত্রিম রক্ত মানুষের দেহে প্রয়োগ করা কি আদৌ সম্ভব? কাজ করবে? কৃত্রিম রক্ত তৈরি করছে কীভাবে?
চলুন, জানার শুরুটা হোক আর্টিফিশিয়াল ব্লাড দিয়ে!
মানুষের দেহে রক্তের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত কিংবা রোগে আক্রান্ত কিংবা দুর্লভ রক্তের গ্রুপের অধিকারী মানুষ জানে রক্তের প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা! অতিপ্রয়োজনে রক্তের যেন অভাব না হয়, সে কারণে আদিকাল থেকেই মানুষের রক্তের বিকল্পের খোঁজ চলছে। এমনকি পশুর রক্তকেও বিকল্প হিসেবে নেওয়া যায় কি-না তার গবেষণাও চলেছিলো। অনেক গবেষণা, চড়াই উৎরাই পার হয়ে বিজ্ঞানীরা আর্টিফিশিয়াল ব্লাডের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেন।
মানুষের দেহে রক্তের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। যেমন- লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন আদান-প্রদান করে। অনুচক্রিকা ক্ষতস্থান সারাতে সাহায্য করে। শ্বেত রক্তকণিকা রোগ প্রতিরোধ করে। আবার রক্তরস/প্লাজমা pH এর ভারসাম্য রক্ষা করে। এখানে যে ল্যাবে তৈরি ব্লাড এর কথা বলা হয়েছে, তা মূলত ল্যাবে তৈরি লোহিত রক্তকণিকার কথা বুঝানো হয়েছে।
আমাদের রক্ত আসেই বোনম্যারোর স্টেম সেল থেকে। আমাদের বোন ম্যারো প্রতিনিয়ত নতুন স্টেম সেল তৈরি করতে থাকে যেগুলো পরবর্তীতে রক্তকণিকায় পরিণত হয়। এর আগে রিসার্চাররা ল্যাবে ডোনেটেড স্টেম সেল থেকে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করেছিলেন, তবে তা ছিলো অকার্যকর প্রক্রিয়া। এরপরে ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিতে একদল গবেষক ভিন্ন একটা উপায় অবলম্বন করেন- অ্যাডাল্ট স্টেম সেলগুলোকে এরিথ্রয়েড স্টেম সেল-এ রুপান্তরিত করে। এবারের গবেষণাও কিন্তু তারা করেছেন স্টেম সেল কে নিয়েই।
এটি কিভাবে কাজ করে?
প্রথমে মানুষের ব্লাড থেকে এক পিন্ট (৪৭০ মিলি) নেওয়া হয়। ম্যাগনেটিক বীডস এর মাধ্যমে সেখান থেকে ফ্লেক্সিবল স্টেম সেল নেওয়া হয় যেগুলো পরবর্তীতে লোহিত রক্তকণিকা হওয়ার সক্ষমতা রাখে৷
এই স্টেম সেলগুলোকে ল্যাবে নিউট্রিয়েন্ট সলিউশনে রেখে সংখ্যায় বৃদ্ধি করানো হয়। এই সলিউশনে স্টেম সেলগুলো ম্যাচিউর হয়। ২৪ লিটার নিউট্রিয়েন্ট সলিউশন থেকে দুই টেবিলচামচ লোহিত রক্তকণিকা পাওয়া যায়।
এরপর এদের আস্তে আস্তে ফিল্টার করা হয়। এই প্রসেসে অর্ধ-মিলিয়ন স্টেম সেল থেকে পঞ্চাশ বিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা পাওয়া যায়। এখানে থেকে ফিল্টারেশনে ১৫ বিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা প্রতিস্থাপনের জন্য বাছাই করা হয়।
ট্রায়ালের জন্য ল্যাবে তৈরি রক্ততে রেডিওএক্টিভ সাবস্টেন্স ট্যাগ দেওয়া হয়েছে, যাতে করে এই কণিকাগুলোকে ট্র্যাক করে বোঝা যায় এটি শরীরে কতদিন স্থায়ী হয়।
আর্টিফিশিয়াল ব্লাড এর উপর এত জোর দেওয়া হচ্ছে কেন?
কোনো দুর্ঘটনায় যেন রক্তের স্বল্পতা না পড়ে; অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ দুর্লভ রক্তের গ্রুপের অধিকারী, সেক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ব্লাড তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারে।
অবশ্যই রক্তদাতাদের রিপ্লেস করে এই সুবিধাগুলো নেওয়া হবে না। কৃত্রিম রক্তের ব্যবহার হবে শুধু একান্ত প্রয়োজনীয় সময়গুলোতে।
নরমাল ব্লাড ডোনেশন এর ক্ষেত্রে রক্তের সাথে নতুন-পুরাতন দুই ধরনের রক্তকণিকা যুক্ত থাকতে পারে, এতে তার জীবনকাল সবসময় আনপ্রেডিক্টেবল। যেহেতু, আর্টিফিশিয়াল ব্লাড একদম ফ্রেশ থাকবে, তাই আশা করা যায় এটি ১২০ দিনের মতো শরীরে স্থায়ী হবে। এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট অনুসারে বর্তমানে রক্তদানের জন্য NHS-এর প্রায় গড়ে 145 পাউন্ড খরচ হয়। ল্যাবে বিকল্প রক্তের ক্ষেত্রে সম্ভবত আরও ব্যয়বহুল হবে, কিন্তু তা প্রাণ বাঁচাবে অসংখ্য মানুষের!