ক্যালেন্ডার! আমাদের দিন তারিখের হিসেব রাখার একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু কোথা থেকে এলো এই ক্যালেন্ডারের নিয়ম? কে–ই বা শুরু করলো? চলুন জেনে নিই!
কেন আমরা দীর্ঘ বছরগুলোকে লিপ ইয়ার বলি?
চতুর্দশ শতাব্দীর আগে আমরা এই নামটির সাথে পরিচিত ছিলাম না। “লিপ” শব্দটি বছরের অন্যান্য দিন গুলোর উপর লিপ দিনগুলোর প্রভাবের দিকটি প্রকাশ করে। যেমন, ২০১৪ সালে মার্চের ৯ তারিখ ছিলো রবিবার; ২০১৫ তে হলো সোমবার, কিন্তু ২০১৬ সালে এসে তা হয়ে গেল বুধবার। কারন ২০১৬ সাল ছিলো লিপ ইয়ার, ফলে সেখানে ফেব্রুয়ারিতে ২৯ তারিখ অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছিলো। এতে করে মাঝের মঙ্গলবারটি অতিক্রম (leap over) করা হয়, যা থেকে এই লিপ ইয়ার নামটি এসেছে।
লিপ ইয়ার ও ক্যালেন্ডারের ইতিহাস :
আমরা দুই ধরনের ক্যালেন্ডারের কথা জানি, জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারটি ব্যবহার করা হয়। এটিকে অনেকসময় “খ্রিস্টান ক্যালেন্ডার” বা “পশ্চিমা ক্যালেন্ডার” ও বলা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এটি সিভিল ক্যালেন্ডার হিসাবে স্বীকৃত। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারটি মূলত জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ত্রুটিগুলি ঠিক করার জন্য ১৫৮২ সালে প্রবর্তন করা হয়েছিল।
কিন্তু এক বছরের দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৫ দিন নয়, এটি আসলে কিছুটা কম। শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্যালেন্ডারটি তার ভারসাম্য হারায়। ১৬ তম শতাব্দীতে দেখা যায় যে বসন্তের প্রথম দিনটি যেটি ২০ শে মার্চে হওয়ার কথা তা ১০ দিন আগে চলে গেছে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে, প্রতি চতুর্থ বছরে ৩৬৬ দিন ছিল। রোমান জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গণনা করেছিলেন যে পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৬৫.২৫ দিন।
১০ দিনের এই ত্রুটিটি সনাক্ত করে, পোপ গ্রেগরি ত্রয়োদশ (অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস) একটি নতুন সিস্টেম তৈরি করেছিলেন যা ক্যালেন্ডারটিকে ঋতুর সাথে ভারসাম্যে রাখবে।
অ্যালোসিয়াস এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন যাতে প্রতি চতুর্থ বছরটি একটি লিপ ইয়ার ছিল; তবে যদি শতাব্দী বছর হয় তবে তা ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য ছিল । উদাহরণস্বরূপ, ২০০০ এবং ১৬০০ বছরগুলি লিপ ইয়ার ছিল, তবে ১৯০০, ১৮০০ বা ১৭০০ নয়।
২০০০-বছরের সময়কালে, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ৫০০ টি লিপ ইয়ার ছিল, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যা ছিলো কেবল ৪৮৫ টি। এই পরিবর্তনটি একটি হিসাবের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল যেখানে গড়ে এক বছরের দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৪২৫ দিন। নাসার হিসেব অনুযায়ী, আধুনিক সময়ে পরিমাপকৃত মানটি ৩৬৫.২৪২২ দিন । এই সামান্য পার্থক্যটির জন্য, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসাবে ৭,৭০০ বছর পরে একটা গরমিল দেখা দেয়।
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে, পোপের কেবল স্পেন, পর্তুগাল, পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথ এবং ইতালিতে ক্যালেন্ডার সংস্কার করার ক্ষমতা ছিল। এই অঞ্চলগুলিতে ক্যালেন্ডার থেকে 10 দিন কেটে দেওয়া হয়েছিল; বৃহষ্পতিবার, অক্টোবর ৪, ১৫৮২ থেকে শুক্রবার, অক্টোবর ১৫, ১৫৮২ পর্যন্ত, যেন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ঋতুর পরিবর্তন ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে তাল মেলাতে পারে।
অনেক ক্যাথলিক দেশ এবং উপনিবেশগুলি পরিবর্তনটি অনুসরণ করে, তবে বেশ কয়েকটি দেশ ১০ দিন হারাতে আপত্তি জানায়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য (আমেরিকান উপনিবেশগুলি সহ) ১৭৫২ অবধি পরিবর্তনটি গ্রহণ করেনি। শেষ পর্যন্ত জাপান ১৮৭৩ সালে এবং ১৮৯৫ সালে কোরিয়া গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করেছিল। ১৯২৩ সালে গ্রীস সর্বশেষ ইয়োরোপীয় দেশ হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
তবে আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, ইরান, নেপাল এবং সৌদি আরব সহ বেশ কয়েকটি দেশ এখনও এটি গ্রহণ করে নি। তবুও এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার–ই আন্তর্জাতিক মান হিসাবে স্বীকৃত। অনেক দেশ অন্যান্য ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার এবং কিছু জায়গায় পরিবর্তিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে।
কিছু অর্থোডক্স গীর্জা একটি সংশোধিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে, যার ফলস্বরূপ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ৭ই জানুয়ারি ক্রিসমাস উদযাপন করা হয় যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ২৫শে ডিসেম্বর।
মাইশা আমিন / নিজস্ব প্রতিবেদক