কিছুদিন ধরেই রাতুল ঠান্ডা, জ্বর এবং মাথা ব্যথায় ভুগছে। সে বুঝতে পারছিলো যে তার শরীর দূর্বল হয়ে আসছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসক তাকে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাথে এইচআইভি পরীক্ষারও পরামর্শ দেন এবং রিপোর্ট দেখে ডাক্তার তাকে নিশ্চিত করেন যে রাতুল এইচআইভি পজিটিভ। তখনই রাতুলের মনে পড়ে যে সে কিছুদিন আগেই অপরিচিত একজন ব্যক্তির থেকে রক্ত গ্রহণ করেছিলো। তবে প্রচলিত রক্তে এইচআইভি নির্ণয়ের পদ্ধতি -র বদলে যদি আরেকটু উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা যেত, তাহলে হয়তো খুব সহজে অল্প পরিশ্রমে এইচআইভি শণাক্ত করা যেত! আর এই উন্নত প্রযুক্তি তথা মাইক্রোস্কোপিক যন্ত্র নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা।
প্রথমেই জানা দরকার এইচআইভি কী?
HIV (Human Immunodeficiency Virus) হচ্ছে এমন ভাইরাস যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি খুব সহজেই অন্য যেকোনো রোগে সংক্রমিত হতে পারে যা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ HIV এর টিকা আবিষ্কারে নতুন মাইলফলক।
এইচআইভি কী, তা তো জানা হলো। এবার জেনে নেওয়া যাক কীভাবে যন্ত্রের সাহায্যে এইচআইভি শনাক্ত করা যায়। ৪২ বছর আগে এই রোগটি আবির্ভূত হওয়ার পর থেকে এইডস গবেষকরা অনেক ক্ষেত্রেই অভাবনীয় সাফল্য এনেছেন। মাইক্রোস্কোপিক যন্ত্র তেমনি এক আবিষ্কার। মূলত মাইক্রোস্কোপিক এই মাইক্রোফ্লুইডিক যন্ত্রগুলো লুকিয়ে থাকা ভাইরাসকে আশ্রয় দেয় এমন কোষগুলোর জিনের বিকাশকে চিহ্নিত করে। মাইক্রোস্কোপিক যন্ত্রটির তিনটি অংশ রয়েছে। এই তিনটি অংশের মাঝে একটি অংশ রয়েছে যা রক্তের নমুনা থেকে এইচআইভি- সংক্রমিত কোষগুলোকে বিশ্লেষণের জন্য আলাদা করে এবং আক্রান্ত কোষগুলোর জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে একটি ফোঁটায় আটকে রাখে।
জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে এইচআইভি শণাক্তে মাইক্রোস্কোপিক যন্ত্র ব্যবহার করা করা হয়েছে?
বোরিৎজ এবং তার সহকর্মীরা তিনজন এইচআইভি-পজিটিভ লোকের থেকে আলাদা আলাদাভাবে সংক্রামিত ব্যক্তির CD4 কোষে সক্রিয় জিনগুলো তিনজন অসংক্রমিত ব্যক্তির CD4 কোষের জিনগুলোর সাথে তুলনা করার জন্য মাইক্রোস্কোপিক যন্ত্রগুলো ব্যবহার করেছিলেন। যখন একটি জিন চলতে শুরু করে তখন তার ডিএনএ মেসেঞ্জার আরএনএ-এর একটি স্ট্যান্ডে প্রতিলিপি করা হয় যা একটি প্রোটন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের CD4 কোষের তুলনায় গবেষকরা প্রায় 18,000 mRNA-এর সম্পূর্ণ স্যুট বিশ্লেষণ করে ট্রান্সক্রিপ্টোম এবং দুটি আলাদা প্যাটার্ন খুঁজে পেয়েছেন। CD4 কোষগুলো সাধারণত কোষের মৃত্যুকে চালিত করে সংকেত দান করে এমন পথগুলোকে বাধা দেয় এবং তারা ওইসব জিনগুলোকেও সক্রিয় করে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
লেউইন বলেছেন যে, তিনি ইতিমধ্যেই বোরিৎজের দলের শনাক্ত করা জিনগুলো পরীক্ষা করছেন এবং ভাবছেন যে CRISPR-এর মতো একটি জিনোম-সম্পাদনা পদ্ধতি আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করতে পারে কিনা, (উদাহরণস্বরূপ, CD4 জিনগুলো যেকোনো একটিকে বিকল করে) যা কোষের মৃত্যুর পথকে বন্ধ করে। এটিই মূলত রক্তে এইচআইভি নির্ণয়ের পদ্ধতি গুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে অত্যাধুনিক পদ্ধতি!
এইচআইভি নিরাময়ের ক্ষেত্রে গবেষকদের অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আপনি কি জানেন চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
এইচআইভি সংক্রমণ নিরাময় বায়োমেডিসিনে জগতের সবচেয়ে কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ কারণ যে কোষগুলো তাদের ক্রোমোজমে ভাইরাস আক্রান্ত ডিএনএ ধারণ করে তারা শক্তিশালী ঔষধ এবং ইমিউন প্রতিরক্ষার মধ্যেও টিকে থাকে। একটি গবেষকদল প্রথমবারের মতো অনেকগুলো ভাইরাল কোষ থেকে একটি ভাইরাস আক্রান্ত কোষকে আলাদা করেছে এবং তাদের জিনগত কার্যকলাপ চিহ্নিত করে নিরাময়ের নতুন কৌশলগুলো সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: science.org
নিজস্ব প্রতিবেদক/ জেসিকা আক্তার
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1
+1