অন্ধত্বের প্রধান একটি কারণ হলো ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। উন্নত দেশগুলোতে অন্ধত্বের এই প্রধান কারণ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এর সাথে মোকাবেলায় গবেষকরা রেটিনাল কোষগুলোকে পুনরায় বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আর তারা অসম্ভাব্য এই কাজকে সম্ভাব্য করে তুলতে সাহায্য নিয়েছেন ন্যানোটেকনোলজির।
ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (Macular Degenaration) হলো কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের একটি রূপ, যার সামাজিক এবং মানসিকভাবে পরিণাম ব্যাপক। এটি এই পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী কয়েকশত মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করেছে এবং এর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। রেটিনাল পিগমেন্ট কোষের ক্ষতির ফল হলো এই ম্যাকুলার ডিজেনারেশন।
আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম (Immune System) এই রেটিনাল পিগমেন্ট কোষগুলোকে ধ্বংস শুরু করার পরে এদেরকে পুনরায় বৃদ্ধি করতে এবং প্রতিস্থাপন করতে অক্ষম। তাই এই কোষগুলো প্রতিস্থাপনের বিকল্প পদ্ধতি এবং এই কোষগুলো যে ঝিল্লির মাঝে আবদ্ধ থাকে তা আবিষ্কার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আংলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটির (Anglia Ruskin University) বায়োকেমিস্ট, বারবারা পিয়েরসিওনেক (Barbara Pierscionek) বলেন যে,
“অতীতে বিজ্ঞানীরা সমতল পৃষ্ঠে কোষ বৃদ্ধি করতেন যা জৈবিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক ও কার্যকরী নয়। কিন্তু স্ক্যাফোল্ডের (স্ক্যাফোল্ড হলো মূলত পলিমেরিক বায়োম্যাটেরিয়াল, যা একটি কোষের সাথে আরেকটি কোষকে সংযুক্ত করে একটি কার্যকরী টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে) মাধ্যমে নতুন কৌশলগুলো ব্যবহার করে কোষগুলোকে একটি ত্রিমাত্রিক অবকাঠামো প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।”
তারা এমন এক উপাদান তৈরি করেন যার জল-আকর্ষক ক্ষমতা অনেক বেশি। যার ফলে কোষগুলোকে স্ক্যাফোল্ডসের (Scaffolds) সাথে আবদ্ধ হতে সাহায্য করে এবং তাদের বৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করে। তবে যখন প্রভাবটি খুব শক্তিশালী হয় তখন কোষগুলোর মৃত্যুর কারণ হিসেবেও দেখা গেছে পূর্ববর্তী গবেষণায়।
গবেষকদলের কাছে নতুন গঠনটি সঠিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ সিস্টেমটি রেটিনাল ল্যাবে কোষগুলোর দৈহিক বৃদ্ধি এবং দীর্ঘায়ু প্রদানে সক্ষম হয়েছেন। এটি এই কোষগুলোকে কমপক্ষে ১৫০ দিনের জন্য সতেজ রাখতে পারে।
এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পদ্ধতিটি রেটিনাল কোষগুলোর প্রয়োজনীয় একক স্তরকে সুস্থ রাখতে পারে। তবে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন সহ অন্ধত্ব সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য এই পদ্ধতিটি ঠিক কতটুকু পর্যন্ত কার্যকর হবে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির (Nottingham Trent University) জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞানী বায়োলা এগবোন (Biola Egbowon) এবং এই গবেষণার সহকর্মীরা তাদের গবেষণাপত্রে সাবধান করে বলেন যে,
“একটি পেট্রি ডিশে কোষকে বৃদ্ধি করা এবং কারো শরীরের মধ্যে একটি কার্যকরী টিস্যুতে সেটি প্রয়োগ করার মধ্যে একটি বিশাল পার্থক্য রয়েছে।”
এই গবেষক দলের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে কোষগুলোর অভিযোজন অনুসন্ধান করা, অর্থাৎ, একটি জীবন্ত শরীরের ভিতরে কোষগুলো নিয়ে পরীক্ষার আগে কোষগুলো ভালোভাবে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে পারছে কিনা তা যাচাই করতে চান। কেননা এই বিষয়টি নিশ্চিত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
হাসিবুল ইসলাম সৌরভ / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সাইন্স অ্যালার্ট, সাইন্স ডিরেক্ট, এআরইউ
+1
+1
+1
+1
+1
3
+1
+1