হঠাৎ অনেকদিন পর কাউকে দেখে আপনি হয়ত তাৎক্ষণিক তার নাম মনে করতে পারছেন না বা চিনতে পারছেন না সে কে। এই জিনিসটা আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটে। আমরা হয়ত ভাবি এটা হতেই পারে অনেকদিন পর কারো সাথে দেখা হলে। কিন্তু যদি সারা জীবনের জন্য আপনি কাউকে, এমনকি নিজের চেহারাও চিনতে না পারেন, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলুন তো? আপনার কী মনে হয়? বিষয়টা কী স্বাভাবিক? মোটেই না। আজকে যে রোগটা নিয়ে আমরা জানবো তা হলো প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া (Prosopagnosia)।
কী এই প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া (Prosopagnosia)?
প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া এমন একটি রোগ যার ফলে মানুষ দুইটি চেহারার মধ্যে পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, এক্ষেত্রে চেনা মানুষদের চেহারাও চিনতে না পারা একটা অন্যতম লক্ষণ। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি নিজেদের চেহারাও চিনতে পারে না তাঁরা। স্বাভাবিক-ভাবেই ধীরে ধীরে জীবনটা তাঁদের জন্য হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।
প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া মূলত দুই ধরনের হতে পারে-
- ডেভেলপমেন্টাল প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া- রোগীর মস্তিষ্কে কোন ক্ষতি ছাড়াই তারা সে প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ায় ভোগে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি পঞ্চাশ জনের প্রায় একজন ডেভেলপমেন্ট প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া স্বীকার হয়। তাঁদের মস্তিষ্কের এই অক্ষমতাটিকে জেনেটিক সমস্যা মনে করা হয় এবং এটি বংশপরম্পরায় চলতে পারে।
- এ্যকোয়ার্ড প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া- এ্যকোয়ার্ড প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া কিন্তু আবার তুলনামূলকভাবে দুর্লভ। সাধারণত মস্তিষ্ক কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর কারনে হতে পারে স্ট্রোক, অ্যাক্সিডেন্ট, মাথায় আঘাত পাওয়া ইত্যাদি।
গবেষকদের ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়ার ফলেই বুঝি প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া হতে পারে; কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে অনেক মানুষের জন্ম থেকেই প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া, যার আরেকটি নাম ডেভেলপমেন্টাল প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া, থাকতে পারে ।
দুঃখজনকভাবে এ রোগের এখনো কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কার করা হয়নি; কিন্তু গবেষকেরা নিয়মিত রোগীদেরকে নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সাধারণত প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ায় ভোগা রোগীরা জামা, গলার স্বর, হাটার ধরন এবং এরকম ছোট ছোট জিনিস মনে রাখার মাধ্যমে কোন মানুষকে চিনতে পারে; কিন্তু হঠাৎ একটি অচেনা পরিবেশে অচেনা মানুষকে দেখলে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়।