মৃত্যুর ১২৩ দিন পর জন্ম নিল সন্তান! এমন একটা নিউজ সবার নিউজফিডে আশাকরি পেয়েছেন। এখন বিষয়টা নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন, ব্যাপারটা আসলে কেমনে সম্ভব?
আমার মনে প্রথম যে প্রশ্নটা জাগে ব্রেইন ডেড মানে কি পুরোপুরি মৃত্যু না? যেহেতু বলা হয়েছে ব্রাজিলের ফ্রাঙ্কিয়েলেন দা সিলভা নামের ২১বছর বয়সী মহিলাটি গর্ভাবস্থায় (৯ সপ্তাহ) স্ট্রোক করে মারা যান। ব্রেইন ডেড হওয়ার কারণে তার গর্বের সন্তানরা তখনও জীবিত ছিল, তাই চিকিৎসকরা জমজ সন্তানগুলোকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাহলে প্রথমে এই ব্রেইন ডেড সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।
ব্রেইন ডেথ (ব্রেন স্টেম ডেথ নামেও পরিচিত) হল যখন কৃত্রিম লাইফ সাপোর্টে থাকা একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কের সকল কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারও ব্রেইন ডেড হয়েছে বললে, অনেকের মনে নানা বিভ্রান্তি থেকে যায় কারণ লাইফ সাপোর্ট মেশিন তাদের হার্টের স্পন্দন তখনও বজায় রাখবে এবং ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে শ্বাস প্রশ্বাসও চলমান থাকবে। তাহলে এখন আরও একটা প্রশ্ন জাগে কোমায় যাওয়া আর ব্রেইন ডেড এক কিনা?
-না। একজন ব্যক্তির ব্রেইন ডেড মানে সেই আইনত মৃত। তাদের সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই কারণ তাদের শরীর কৃত্রিম লাইফ সাপোর্ট ছাড়া বাঁচতে পারে না। তারা কখনই চেতনা ফিরে পাবে না বা আবার নিজেরাই শ্বাস নিতে শুরু করবে না যেমনটা একজন কোমায় থাকা ব্যক্তির বেলায় সম্ভব। তবে কৃত্রিমভাবে ব্রেইন ডেড হওয়া ব্যক্তির শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বেশ কিছুদিন সচল রাখা যায়, এমনটাই করা হইছিল ব্রাজিলের সেই মহিলার বেলায়।
নিউরোলজিক্যাল আইসিইউ-এর প্রধান ডাঃ ডাল্টন রিভাবেম এই কেসটির প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। যেহেতু এটি মেডিকেল টিমের জন্য অপরিচিত বিষয় ছিল তাই ডাঃ রিভাবেম পর্তুগালের একজন চিকিৎসকের সাহায্য চেয়েছিলেন যিনি একই রকম একটি কেস পরিচালনা করেছিলেন যেখানে একটি ভ্রূণ জন্মের আগে ১০৭ দিন গর্ভে রাখা হয়। ডঃ রিভাবেম বলেন, “এমন অনেক ঘটনা আছে কিন্তু আমাদেরটা ছিল ১২৩ দিনের, সবচেয়ে দীর্ঘতম ঘটনা এবং আমরা দুই মাসের ভ্রূণ দিয়ে শুরু করেছি এবং যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছি।“তিনি আরও বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কেস ছিল যার জন্য অনেক -বিভাগীয় কাজের সমন্বয় প্রয়োজন ছিল। রক্তের চাপ, অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে, ক্রমাগত পুষ্টি এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ওষুধের অবিরাম সহায়তা, ২৪-ঘন্টা হেমোডাইনামিক পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে, শিরা, হৃৎপিণ্ড এবং ধমনীতে রক্তচাপ পরিমাপ করা, রক্ত প্রবাহ এবং শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রবাহিত করা, প্রতিদিন আল্ট্রাসাউন্ড করে যমজদের পরীক্ষা করা ইত্যাদি অনেক বিষয়ের সমন্বয় প্রয়োজন ছিল।”
ডাঃ রিভাবেম আরও বলেন, “আমাদের প্রধান উদ্বেগের মধ্যে একটি ছিল শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য মায়ের অঙ্গের কার্যকারিতা অব্যাহত রাখা। অন্য উদ্বেগ ছিল শিশুদের মায়ের ভালবাসা এবং স্নেহ অনুভব করানোর উপায় খুঁজে বের করা। শিশুদের পরিবার এবং ২০ জনেরও বেশি পেশাদার, রোগী এবং তার বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার সাথে জড়িত ছিলেন।”
ওয়ার্ডে ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং স্বাস্থ্য পেশাদাররা গর্ভের শিশুদের যত্নের, তাদের গান শুনানো,তাদের সাথে কথা বলা এবং আদর করার একটি অসাধারণ রুটিন তৈরি করেন। ১২৩ দিন পর ১.৪ এবং ১.৩ কেজি ওজনের দুটো শিশু জন্মগ্রহণ করেন। সন্তান জন্মের পর তার সচল অঙ্গগুলোও দান করে দেয়া হয়। শিশুদের স্বাস্থ্য একই বয়সের অকাল শিশুদের তুলনায় অনেক ভালো ছিল, পরে নবজাতকদের তিন মাস ইনকিউবেটরে রাখা হয়।
ডাঃ রিভাবেম বলেন, ‘এই ঘটনাটির সাফল্য ছিল দুর্দান্ত একটি দলগত কাজ এবং অবশ্যই ঐশ্বরিক!’
Tanjina Sultana Shahin / Team Science Bee
Source: https://nypost.com/2017/07/11/brain-dead-woman-kept-alive-for-months-so-she-could-deliver-twins/