“বিষ” বা ভেনম হলো প্রকৃতি প্রদত্ত এক জৈবিক অস্ত্র। আত্নরক্ষায় অথবা শিকারকে নিষ্ক্রিয় করতে বিষ বহনকারী প্রাণীগুলো বিষগ্রন্থি থেকে এই অস্ত্র নিক্ষেপ করে। কেমন হবে যদি ভবিষ্যতে মানুষ-এর বিষগ্রন্থি থাকে? আর সত্যিই কি মানুষের দেহে বিষ গ্রন্থি উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা রয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কীভাবে বিষগ্রন্থি তৈরি হয়?
প্রাণিদেহে বিষগ্রন্থি কিভাবে তৈরি হয়, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন আশ্চর্য রকমের কিছু তথ্য। সৃষ্টির সেরা জীব মানবজাতি সহ অন্যান্য যে কোন স্তন্যপায়ীর দেহে তৈরি হতে পারে বিষগ্রন্থি!
গবেষকেরা বিষাক্ত প্রাণীগুলোর জিন নিয়ে গবেষণা করেন। তারা দেখতে পান ‘হাউজকিপিং‘ জিনগুলো বিষের সাথে সম্পর্কিত। নিজেরা বিষ তৈরি না করলেও এই নিয়ন্ত্রক জিনগুলোই বিষতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করে। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, হাউসকিপিং জিনগুলোর মতো একই ধরনের জিন মানুষের লালাগ্রন্থিতে পাওয়া যায়। বিষ মূলত একটি প্রোটিন, মানুষের লালা গ্রন্থির জিনগুলোও প্রচুর প্রোটিন উৎপন্ন করে। অর্থাৎ, গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল হলো- মানুষের লালা গ্রন্থি ভবিষ্যতে বিষগ্রন্থিতে রূপান্তরিত হলেও হতে পারে।
কবে নাগাদ মানুষের বিষগ্রন্থি তৈরি হতে শুরু করতে পারে?
দুটি আলাদা প্রাণীতেও একই রকম বিষ থাকতে পারে। যেমন, সহস্রপদীর বিষের কিছু উপাদান সাপের মধ্যেও পাওয়া যায়। আবার, একই প্রজাতির দুটি প্রাণীর বিষ আলাদাও হতে পারে। যেমন, মরুভূমির সাপ ও পাথুরে উপত্যকার সাপ। মরুর তপ্ত বুকে সাপেরা সাধারণত ইঁদুর শিকার করে। এই সাপগুলোর বিষ কাজ করে সংবহনতন্ত্রের উপর। কেননা সমতল ভূমিতে স্বল্প দূরত্বের মধ্যে ইঁদুরকে চিহ্নিত করা খুব কঠিন নয়। অন্যদিকে পাথুরে উপত্যকায় সাপেরা সাধারণত টিকটিকি শিকার করে থাকে। এদের বিষগুলো হল উচ্চমাত্রার প্রোটিন নিউরোটক্সিন। কারণ, এসব স্থানে শিকারকে দ্রুত বশ করা না গেলে তা মুহূর্তেই গর্তে লুকিয়ে পড়বে।
অর্থাৎ, প্রাণীর প্রয়োজনে প্রাকৃতিকভাবেই মূলত বিষ ও এর ধরন রূপান্তরিত হয়। সেক্ষেত্রে প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করা মানুষের প্রাকৃতিক কোনো প্রয়োজনে বিষের দরকার নেই। মানুষ তার বুদ্ধি দিয়ে যন্ত্র, অস্ত্র, সামাজিক কাঠামোর যে ধারা তৈরি করেছে তাতে বিষ ছাড়াই শাসন করা যায় প্রকৃতিকে। সুতরাং যদি মানুষ তার খাদ্যাভ্যাস, আচরণ, বাসস্থান পরিবর্তন না করে তবে ভবিষ্যতে মানুষের বিষগ্রন্থি উদ্ভব না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: Live Science, India Today, Science Alert, Independent.uk, Interesting Engineering, Popular Mechanics, lad bible