মহাবিশ্ব আশ্চর্যে এবং জটিলতায় পূর্ণ। একই কথা প্রযোজ্য মানুষের মস্তিষ্কের জন্যও। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দুই ক্ষেত্রেই আমাদের ধারণার চেয়ে আরও বেশি মিল থাকতে পারে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই দুটি জটিল সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য এবং সাদৃশ্য বিশ্লেষণ করেছে: মহাবিশ্ব এবং এর ছায়াপথ, এবং মানুষের মস্তিষ্ক ও তার নিউরন।
গবেষণাটির ফলাফল পদার্থবিজ্ঞানের ফ্রন্টিয়ার্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাটি ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Bologna) জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্কো ভ্যাজা এবং ইতালির ভেরোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Verona) নিউরোসার্জন আলবার্তো ফেলেটি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।
মানব মস্তিষ্ক একটি জটিল এবং বহু কাঠামোর সংমিশ্রণ। যেখানে সেলুলার, মলিকিউলার এবং নিউরন একসাথে সহাবস্থান করে। এটিকে একটি শ্রেণিবদ্ধ নেটওয়ার্ক হিসাবে তুলনা করা যেতে পারে।
বহু দশক ধরে সংগ্রহ করা টেলিস্কোপের তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, মহাবিশ্ব ল্যাম্বডা কোল্ড ডার্ক ম্যাটার মডেল (Lambda Cold Dark Matter Model) নামে একটি মডেল অনুসরণ করে বলে মনে করা হয়।
যদিও উপরোক্ত দুটি সিস্টেমে শারীরিক মিথস্ক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন, তবুও তাদের মাইক্রোস্কোপিক এবং টেলিস্কোপিক চিত্রগুলো অনুরূপ আকারের রূপ ধারণ করে, এটি প্রায়শই লক্ষ্য করা গেছে যে মহাজাগতিক ওয়েব এবং নিউরনের ওয়েবটি দেখতে প্রায় একই রকম।
ড. ফ্রাঙ্কো ভ্যাজা বলেন, “আমরা উভয় সিস্টেমের ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। এটি এমন একটি কৌশল যা প্রায়শই ছায়াপথের অধ্যয়ন করার জন্য জন্য মহাজাগতিকবিদ্যায় ব্যবহৃত হয়।”
“আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে, নিউরনাল নেটওয়ার্কের মধ্যে বস্তুসমূহ যেভাবে বন্টিত হয় , ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণ করে মহাজাগতিক ওয়েবেও পদার্থ বন্টিত হয়। তবে অবশ্যই, ক্ষুদ্রতম এককে যা থাকে ৫, বৃহত্তর স্কেলে তা চলে যায় মিলিয়ন থেকে ৫০০ মিলিয়ন আলোক-বছর পর্যন্ত।
স্কেলগুলো স্পষ্টতই ব্যাপকভাবে পৃথক হলেও কাঠামোগুলি একই রকম এবং একইভাবে একে অপরের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে।”
গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বিলিয়ন বিলিয়ন নিউরন একত্রে মস্তিষ্ক তৈরি করে।
পর্যবেক্ষণ থেকে বলা যায় যে, আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে।
উভয় ক্ষেত্রেই গ্যালাক্সি এবং নিউরনগুলি মস্তিষ্ক এবং মহাবিশ্বের প্রকৃত ভরগুলির প্রায় ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের ৩০ শতাংশ এবং নিউরনগুলোও মস্তিষ্কের ৩০ শতাংশ।
প্রতিটি সিস্টেমই একটি জটিল ওয়েব বা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একত্রিত হয়।
গ্যালাক্সির অবশিষ্ট ৭০ শতাংশে রয়েছে ডার্ক এনার্জি (Dark Energy), এবং মস্তিষ্কের অবশিষ্ট ৭০ শতাংশে রয়েছে জল।
মিঃ ফেলেটি বলছিলেন, “সম্ভবত, ছায়াপথ এবং নিউরনের নিয়ন্ত্রণকারী শারীরিক শক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং স্পষ্ট পার্থক্য থাকলেও, দুটি নেটওয়ার্কই সংযোগ রক্ষায় একই ধরণের নীতি অনুসরণ করে।”
মহাজাগতিক ওয়েব এবং গ্যালাক্সির মধ্যে যে নেটওয়ার্ক রয়েছে, অথবা নিউরাল নেটওয়ার্ক বা মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক রয়েছে তাদের থেকেও বেশি সাদৃশ্য রয়েছে এই দুটি নেটওয়ার্কের মধ্যে (মহাজাগতিক ওয়েব এবং নিউরাল ওয়েব)।
গবেষক দলটি আশা করেন যে, তাদের গবেষণার ফলাফল মস্তিষ্ক এবং মহাবিশ্ব এর বিবর্তনের উপর আরও বেশি কিছু জানতে সহায়তা করবে।
কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ ফ্রন্টিয়ারস, সায়েন্স এলার্ট , সাইটেক ডেইলি , পপুলার মেকানিকস , বিগ থিংক , ইনডিপেন্ডেন্ট ,
+1
4
+1
2
+1
+1
9
+1
1
+1
+1
1