মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন সাধারণ মানুষের প্রতিদিন আট ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। এই তথ্যটি আমরা কমবেশি সবাই জানি কারণ পর্যাপ্ত ঘুমই পারে আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে।
নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর করা সমীক্ষা থেকে জানা যায় ঘুমের গুনগত মান মানসিক স্বাস্থ্যের পূর্বাভাস দেয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
পূর্বে হতাশা এবং অন্যান্য মেজাজজনিত অসুস্থতা সহ দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শুধুমাত্র অপর্যাপ্ত ঘুমকেই দায়ী করা হতো। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে কেবল ঘুমকেই প্রাধান্য দেয়া হত। কিন্তু গবেষণায় জানা গেছে নির্দিষ্ট ডায়েট হতে পারে হতাশা প্রতিরোধে সহায়ক। এমনকি নিয়মিত এক্সারসাইজ ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং ঘুম, ডায়েট এবং ব্যায়াম ব্যক্তিজীবনের এমন অপরিহার্য অংশ যা বাস্তব জীবনের সবটুকুই নিয়ন্ত্রণ করে।
ওটাগো মেডিকেল স্কুল থেকে লিড লেখক শ্যা-রুবি উইকহ্যাম বলেছেন, “ঘুম, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট স্বাস্থ্যের তিনটি স্তম্ভ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা তরুণ বয়স্কদের মধ্যে সর্বোত্তম মঙ্গল প্রচারে ভূমিকা রাখতে পারে।“
দলটি তাদের গবেষণাপত্রে ব্যাখ্যা করেছে যে, “পৃথক ভবিষ্যদ্বাণীকারী হিসাবে ঘুম, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং ডায়েটের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক ভূমিকা রাখে তবে একইসাথে এদের প্রত্যেকের কার্যক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ।” তারা আরো বলেছেন যে “এই জীবনযাত্রার প্রতিটি আচরণের গুরুত্ব এককভাবে বা একে অপরের সাথে মিল রেখে এবং গুরুত্বের ক্রমবর্ধমান শৃঙ্খলায় জনসংখ্যা এবং স্বতন্ত্র স্তরের উভয়ই মানসিক স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপকে অবহিত করবে।“
পূর্ববর্তী কিছু গবেষণা থেকে জানা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাল খাওয়া, ঘুম এবং এক্সারসাইজ মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করার ক্ষেত্রে একটি সমন্বয়মূলক প্রভাব ফেলতে পারে। যেখানে একাধিক ভাল জিনিস অন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে। তবে আরেকটি সম্ভাবনা হল, কিছু স্বাস্থ্যকর আচরণ সবার জন্য সমানভাবে কাজ নাও করতে পারে, ফলে হীতে বিপরীত হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের এই তিনটি ফ্যাক্টর নিয়ে যাদের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে কেউ কেউ ইতিমধ্যে নিরামিষ বা নিরামিষাশী ডায়েটে ছিলেন; অন্যরা বিদ্যমান স্বাস্থ্যের অবস্থার জন্য অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ওষুধ গ্রহণ করছে যাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও কম পুরুষ হিসাবে চিহ্নিত। তবে গবেষকরা তাদের বিশ্লেষণে এই পার্থক্যগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলে ধরেছেন।
যারা প্রতি রাতে ১০ ঘন্টা ঘুমিয়েছিলেন তাদের মধ্যে হতাশার লক্ষণগুলি কম দেখা গেছে, তবে অপর্যাপ্ত (<৮ ঘন্টা) বা খুব বেশি ঘুমের (> ১২ঘন্টা) ক্ষেত্রে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।
এছাড়া প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে কাঁচা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত রাখলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানসিক স্বাস্থ্যের দ্বিতীয় সূচক এক্সারসাইজের ক্ষেত্রেও একই বিষয় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে ঘুমের সম্পর্ক বেশি দৃঢ়ভাবে ধরা পড়ে।
“এটি আশ্চর্যজনক কারণ ঘুমের সুপারিশগুলি মূলত মানের চেয়ে বেশি পরিমাণে ফোকাস করে,” উইকহ্যাম বলেছিলেন।
যেহেতু এই গবেষণা মানুষের ঘুম, ক্রিয়াকলাপ বা ডায়েটে কোন পরিবর্তন আনেনি তাই আমরা কেবল আচরণ এবং ফলাফলের মধ্যেই সম্পর্কগুলো আঁকতে পারি, কারণগুলিতে নয়।
সতর্কতার সাথে গবেষকরা তাদের গবেষণাপত্রে পরামর্শ দিয়েছেন যে অল্প বয়স্কদের ভাল মানের ঘুম পাওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া। উচিত তবে গৌণ সূচক বলে ডায়েট কিংবা এক্সারসাইজকে অবহেলা করা যাবে না বরং সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ তাবাসসুম পারভিন সুজানা