দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি কিংবা মহানুভব ব্যক্তিদের প্রয়াণে আমরা সকলেই শোক জ্ঞাপন করে থাকি। বিভিন্ন সংস্কৃতি আর জাতি শ্রেণি ভেদে শোক পালনের আবহটা হয় ব্যতিক্রমী। কখনো মৃত মানুষটিকে স্বরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিরবতা, আবার কখনো বা শোক দিবস পালন। কিন্তু, আফ্রিকার দক্ষিনাঞ্চলীয় দেশ জাম্বিয়ায় শোকের আবহটা কিছুটা ভিন্নধর্মী!
জাম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় কপারবেল্ট ইউনিভার্সিটি (সিবিইউ) ক্যাম্পাসে চলছে শোকের আবহ। প্রেসিডেন্ট, বিরোধীদলীয় নেতা, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ শোক জানাচ্ছেন। তবে এই শোক কোনো মানুষের অকাল প্রয়াণের জন্য নয়, বরং ইউনিভার্সিটির পুকুরে থাকা ‘মাফিশি’ নামের একটি মাছের জন্য। স্থানীয় বেম্বা ভাষায় যার অর্থ ‘বড় মাছ’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পুকুরের বসবাসকারী মাছটির মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ২২ বছর। এর মাঝে ২০ বছরই সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরের কাটায়। ‘সিবিইউ‘ এর শিক্ষার্থীদের কাছে মাছটি ছিলো সৌভাগ্যের প্রতীক। বিবিসির প্রতিবেদক কেনেডি গন্ডউই স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে জানান, অনেকেই পরীক্ষায় ভালো করার আশায় মাছটিকে যত্ন করতো, খাবার দিতো। অনেকেই সপ্তাহে একবার হলেও প্রিয় মাফিশিকে দেখার জন্য পুকুর পাড়ে আসতো বিভিন্ন খাবার নিয়ে।কপারবেল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এডউইন নাম্বো এর মতে, মাছটি হলো তাদের চাপমুক্তির কারণ, অনেকসময় খারাপ লাগা থেকে পুকুর পাড়ে এসে মাফিশিকে সাঁতরাতে দেখে তাদের মন ভালো হয়ে যেতো। যা আর কখনোই হবেনা।
তবে এখনো পর্যন্ত মাছটির মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে বার্ধক্যজনিত কারণে তার জীবনবসান হয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন সবচাইতে বড় ঘটনা হচ্ছে মাফিশির দেহ মর্গ থেকে চুরি করা হয়েছে। সিবিইউ-এর শিক্ষার্থীরা আশংকা করছে, তাঁদের প্রিয় মাফিশিকে খাওয়ার উদ্দেশ্যেই চুরি করা হয়েছে। সিবিইউ এর ভাইস চ্যান্সেলর নেইসন নগোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রিজার থেকে মাছের চুরি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরিকল্পনা ছিলো মাছটির দেহকে সংরক্ষণ করে প্রদর্শনের ব্যাবস্থা করা হবে। যা এখন প্রায় অনিশ্চিত। স্টুডেন্ট ইউনিয়েনের নেতা এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সংশয় প্রকাশ করে দ্রুত মাউশিকে প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
তবে এতো কিছুর পরও থেমে নেই মাউশির প্রতি মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের জোয়ার। তার প্রয়াণে এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বলন করেছে। শোক জানিয়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বার্তা আসছে। প্রাণির প্রতি মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির কথা কথা উল্লেখ করে তিনি শোকবার্তায় লেখেন, ‘প্রাণীর প্রতি মহানুভবতা থেকেই মানুষের নৈতিকতার বিচার করা সম্ভব’। দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা হাকাইন্ডে হচিলেমাও এক শোক বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহর্মমিতা জানিয়েছেন।
এ এন এম নাঈম/ নিজস্ব প্রতিবেদক