আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ব করোনার মতো আরেক মহামারীর কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে হুশিয়ারি করেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ২০১৫ সালে এক অনুষ্ঠানে মহামারীর ব্যাপারে তিনি আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আর তা ২০১৯ এসে বাস্তবে রূপ নিলো। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মার্কিন অভিনেত্রী, পরিচালক ও প্রযােজক রাশিদা জোনসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি নতুন এ মহামারীর শঙ্কার কথা বলেন ।
তিনি তার বক্তব্যে উদাহরণ স্বরূপ কিছু তথ্য দেন যে, আগামী কয়েক যুগের মধ্যে কোনো কিছুর মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়, সেটা যুদ্ধের মাধ্যমে হবে না, হবে সংক্রমণশীল ভাইরাসের কারণে।
তবে, হাজার হাজার বছর ধরে অনুপস্থিত থাকা বা আমাদের আগে কখনও দেখা হয়নি এমন মারাত্মক ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসগুলির সংস্পর্শ কোথা হতে আসে?
উদাহরণস্বরূপ, আলাস্কার তুন্দ্রার গণকবরগুলিতে সমাধিস্থ হওয়া লাশগুলির মধ্যে ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু ভাইরাস থেকে আরএন-এর টুকরো আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। গুটিবসন্ত এবং বুবোনিক প্লেগ এর জীবাণু সম্ভবত সেই গণকবরে সমাধিত হয়েছে। মানে যাদের সমাহিত করা হয়েছে তারা সবাই এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
২০১১ সালের এক গবেষণায়, বরিস রেভিচ এবং মেরিনা পোডোলনায়া লিখেছিলেন, ১৮ ও ১৯ শতকের মারাত্মক সংক্রমক ভাইরাস ফিরে আসতে পারে। বিশেষত সেইসব কবরস্থান থেকে যেখানে এই সংক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের কবর দেওয়া হয়েছিল।
বিল গেটস এর মতো অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানীরা এরকম আশংকা করেছেন। বিভিন্ন গবেষণায় ‘পারমাফ্রস্ট’ নামক স্তরে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বাসস্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘পারমাফ্রস্ট‘ হলো জীবাণু এবং ভাইরাসের একটি খুব ভাল সংরক্ষক। কারণ এটি শীতল, কোনো অক্সিজেন নেই এবং এটি অন্ধকার।
সাধারণ পরিস্থিতিতে, প্রতিটি গ্রীষ্মে প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার পারমাফ্রস্ট স্তরগুলি গলিত হয়।
পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে আরও পারমাফ্রস্ট গলে যাবে। হিমায়িত পারমাফ্রস্টে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস এক মিলিয়ন বছর অবধি বেঁচে থাকতে পারে। এর অর্থ হলো, বরফ গলে সম্ভাব্য একটি ভাইরাস দূষিত সমুদ্র গড়ে তুলতে পারে।
আর্টিক সার্কেলের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি দ্রুত। বরফ এবং পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য সংক্রামক ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হবে।
এ থেকে বিল গেটসের এই ধারণা বাস্তবমুখী প্রমাণিত হয়। ব্যাপারটা কাকতালীয় হলেও বিল গেটসের কথা ফেলে দেওয়ার মতো না। বিল গেটস দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ও ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কাজে যুক্ত। তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এমনটি বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মতে, করােনার পরে ব্যবসায় ভ্রমণ ৫০ শতাংশ কমে যাবে। এছাড়া অফিসের কার্য সময়ও ৩০ শতাংশ কমবে। মাইক্রোসফট ইতােমধ্যে তাদের কাজের কর্মসূচি কমিয়ে নিচ্ছে এবং কাজের ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এগুলোও পড়ুন বৈশ্বিক উষ্ণতায় বরফের দেশে জেগে উঠছে ভয়ঙ্কর রোগবাহী ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া |
মাহফুজ আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক