২০২০ সাল পৃথিবীতে অশান্তি থাকা সত্ত্বেও মহাকাশবিজ্ঞানের এর জন্য অনেক বড় বছর ছিলো। এই বছর পুরো বিশ্ব মহামারীর কারণে ধীর হয়ে গেলেও মহাকাশ শিল্প এগিয়ে চলেছে বেশ ভালোভাবেই। এবছর একজোড়া নভোচারী প্রথমবারের মতো একটি মহাকাশযানের কক্ষপথে যাত্রা শুরু করেন। তিনটি পৃথক মিশন মঙ্গল গ্রহে পরিচালিত হয়েছে এবং পৃথিবী থেকে কয়েক মিলিয়ন দূরে থাকা একটি রোবট এখন পর্যন্ত ধরা পড়া বৃহত্তম গ্রহানুটির নমুনা সংগ্রহ করেছে।
২০২০ এর দিকে ফিরে তাকালে পুরো অন্ধকার বছরের মধ্যে এই মহাকাশ শিল্প টিকেই একটি আপেক্ষিক উজ্জ্বল জায়গা হিসেবে দেখা যায়। সরকারি চুক্তি দ্বারা উৎসাহিত এবং কিছু সেক্টরে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে বেসরকারি মহাকাশ শিল্প এই বছরের বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়েও অনেক খানি এগিয়েছে। পৃথিবীর হাই রেজুলেশনের চিত্র থেকে শুরু করে ভূ-সাংস্থানিক ম্যাপ তৈরি, সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে স্যাটেলাইটের ব্যবহার ও মহাকাশ শিল্পের ক্ষেত্র।
মহামারীতে টালমাটাল ছিল পুরো বছর। তবে স্পেসফ্লাইট ট্র্যাকার জোনাথন ম্যাকডোভেল এর অনুসারে, বিশ্ব এ বছর ১২০০টিরও বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে যা অতীতের অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি এবং এই উপগ্রহের অনেকগুলি আকারে ছোট ছিল বা স্পেসএক্স এর বাল্ক উপগ্রহ। সংখ্যাগুলি পূর্ববর্তী বছরে মহাকাশ অর্থনীতি কতোটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মহামারী সত্ত্বেও কীভাবে মহাশূন্যে যাত্রা বিরাজমান ছিল সেটারই ইঙ্গিত দেয়।
মহাকাশ বিশ্লেষণ এবং প্রকৌশল সংস্থা ব্রাইস স্পেস এন্ড টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ক্যারিসা ক্রিস্টেনসেন বলেন, “বর্তমানে রাষ্ট্রগুলো মহাকাশ গবেষণার দিকে তাদের মনোযোগ বাড়াচ্ছে, হয় সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাতীয় প্রতিরক্ষার খাতিরে নতুবা অনুসন্ধানের জন্য।” তিনি আরও বলেন, “মহামারী চলাকালীনও সেই জের অব্যাহত ছিলো।”
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে স্পেসএক্সের প্রথম ক্রু মিশনটি বিগত বছর মহাকাশের স্পটলাইটে ছিল। ৩১শে মে নাসার দুই নভোচারী- বব বেহনকেন এবং ডগ হুরলি সংস্থাটির নতুন ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে উড়ে মহাকাশে পাড়ি জমান, যা কিনা স্পেস শাটল প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর থেকে ইউএস হতে কক্ষপথে প্রথম ক্রু মিশন। স্পেসএক্সের এই মিশন মহাকাশ-সম্পর্কিত সাফল্যের জন্য বছরের শিরোনাম হয়েছিল।
নাসার নতুন পার্সেভারেন্স রোভারসহ (যা মঙ্গল গ্রহে জীবন সন্ধানের সরঞ্জাম সজ্জিত) তিনটি পৃথক দেশ (নাসা, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত) থেকে মঙ্গল গ্রহে তিনটি মিশন চালু করা হয়েছিলো। এছাড়া চীন চাঁদে তাদের তৃতীয় রোবোটিক মিশন অবতরণ করিয়েছে চাঁদের পাথর পৃথিবীতে আনার সন্ধানে।
মহামারীর শুরুতে সামাজিক দূরত্বের দিকনির্দেশনাগুলোর দিকে নজর দিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক সংস্থাকে তাদের কার্যক্রম ধীরগতিতে বা বিরতি দিয়ে চালিয়ে নিতে হয়েছিল। ভ্রমণ শিথিলতার কারণে স্যাটেলাইট যন্ত্রাদি পরিবহনে অসুবিধা হওয়ায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বিলম্বিত হয়। প্রকৌশলীদের মহাকাশে কিছু স্যাটেলাইট যন্ত্রাদি পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
কিছু সংস্থা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই সময়ে। লকডাউন সীমাবদ্ধতার উদ্ধৃতি দিয়ে তারা তাদের কর্মী ছাঁটাই করেন। মহাকাশ শিল্পের কয়েকটি ক্ষেত্র মন্দার কবলেও পড়ে।
তবুও মহামারীর সময়ে যে অর্জনগুলি সাধিত হয়েছে তা মানুষের মহাকাশযান চালানোর সক্ষমতাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। মহামারীর এই কঠিন সময়ে এতোসব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও এসব অর্জন, সাফল্যগুলো মহাকাশ শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আভাস দেয়।
মাহমুদুল মুন্না/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ দ্য ভার্জ