প্রায় একযুগ আগে অলৌকিক ধরনের এক রেডিও সিগন্যাল আবিষ্কৃত হয়েছে।মহাশূন্যের গভীরতম স্থানকে এই বেতারের উৎস হিসেবে প্রথমবারের মত শনাক্ত করা হয়েছে।
জ্যোর্তিবিদের নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী প্রথম(FRB-Fast Radio Burst) ২০১৬ সালে নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত একটি টেলিস্কোপ কর্তৃক শনাক্ত হয়।এটি ছিলো পৃথিবী হতে ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি গ্রহ হতে উৎসরিত একধরনের সিগন্যাল।
এফআরবির ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। কোটি কোটি বছর আগে থেকে এই ঘটনা ঘটে আসছে। কিন্তু এই ফাস্ট রেডিও বার্স্ট সম্পর্কে মানুষ প্রথম জানতে পারে ২০০৭ সালে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক ডজনবার শোনা গেছে এমন সিগন্যাল। ২০১৯ সালের জুনে বিজ্ঞানীরা জানান, তারা একটি এফআরবি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যার উৎপত্তিস্থল গ্যালাক্সি।
তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এই নির্দিষ্ট ধারা লক্ষ্য করেছেন তারা। তবে এ সময়ে যে রেডিও তরঙ্গ ভেসে এসেছে তা একটানা চারদিন আসছে। তারপর ১২ দিনের বিরতি। আবার গোটা প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হচ্ছে।
সাধারণতভাবে, একক রেডিও বার্স্ট একবারই আসে। তা বারবার হয় না।
কিন্তু, এফআরবির মূল চরিত্রই হলো উচ্চশক্তিসম্পন্ন ছোট আকারের রেডিও তরঙ্গের বার্স্ট একাধিকবার পাঠানো। আর যখন সেগুলো বারবার ফিরে আসে, তখন একটি ক্লাস্টার (তরঙ্গের একটি আস্ত ঝাঁক) এবং স্পোরাডিক (এলোমেলো ও প্রচণ্ড বিক্ষিপ্ত আকার) ধারণ করে থাকে।
এই কারণে স্বামী চ্যাটার্জীর নেতৃত্বে কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক পরবর্তী ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করার প্রয়াসে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
চ্যাটার্জী বলেন,”আমরা জানি যে, ভিন্ন ভিন্ন বিস্ফোরণ পরবর্তী নির্গত তরজ্ঞ ৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূর থেকে আসা”কিন্তু এই আবিস্কারের ফলে ঠিক কি কারণে উৎপন্ন হয় এই মূল প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি।
এখন পর্যন্ত কোন সঠিক উত্তর ছাড়া,প্রাপ্ত তরজ্ঞ সম্পর্কিত বিষয়টি যুগান্তকারী বলে মতামত ব্যাক্ত করেছেন নেদারল্যান্ডসের নিসজেন রেডবাউন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জৌর্তিবিদ হেইনো ফল্ক,যদিও তিনি গবেষণার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নন।
ইতোমধ্যে কিছু জৌর্তিবিদ ধারণা করেছেন যে,(FRB)কোন ক্লেটালাইসিস(catalysis)ঘটনা হতে সৃস্ট,যেমন গ্রহ সমূহের সুপারনোভাতে পরিণত হয়ে বিস্ফোরণ পরবর্তী রশ্মি হিসেবে এটি নির্গত হতে পারে।
সাধারণত মহাশূন্যে অবস্থানকারী নক্ষত্রসমূহ জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে তা শ্বেতবামণে পরিণত হয়,এই সময়ে এদের ভেতরের ঘনত্ব বহিস্থ ঘনত্ব থেকে বেশ বৃদ্ধি পায়।ফলশ্রুতিতে প্রচন্ড রকমের সংকোচন থেকে বিস্ফোরণ হয় এর ফলে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় তা তরঙ্গ আকারে সঞ্চালিত হয়।সুপারনোভার এই নির্গত তরঙ্গ,সূর্যের শক্তি হতে অনেকগুণ বেশী শক্তিশালী।
সাউথ চায়না মর্ণিং এ প্রকাশিত হয় তথ্য অনুযায়ী নিউট্রন স্টারকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে,যেটি ম্যাগনেটার এর একটি পরিবর্তিত রূপ যা বেশী ঘনত্বযুক্ত কেন্দ্র এবং শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্রযুক্ত।
বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে পুয়ের্তো রিকো ও কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা চলছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো যথাযোগ্য কারণ সহ এর সঠিক উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে জানা যাবে।কিংবা অজানাই থেকে যাবে!
পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে প্রাণী আছে কি না, তা নিয়ে আজও বিজ্ঞানীদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে এলিয়েনের কথা প্রায়ই শোনা যায়। যদিও এর সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি। তাহলে যে বার্তা আসছে তা কীসের, এটা কারা পাঠাচ্ছে-এ প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীরাই দেবেন। তবে এজন্য আমাদের কতদিন বা বছর অপেক্ষা করতে হবে তা কারও জানা নেই।