মৌলিক বলের মধ্যে গ্র্যাভিটিই সবচেয়ে দুর্বল। যেমন, একটি চুম্বকদন্ড চৌম্বকীয়ভাবে একটি কাগজ ক্লিপকে এই গ্র্যাভিটিকে অতিক্রম করে উপরের দিকে সহজেই টেনে নিবে। পিবিএসের নোভা অনুসারে, গ্র্যাভিটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বল থেকে ১০^৪০ গুন দুর্বল।
দৈনন্দিন বস্তুর মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন হলেও গ্র্যাভিটির প্রভাব গ্রহ, তারা এবং গ্যালাক্সির মতো জিনিসের মাপকাঠিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ১৭৯৮ সালে, ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী হেনরি ক্যাভেনডিশ, মহাকর্ষীয় ধ্রুবকটির মান যথাযথভাবে নির্ধারণ করার জন্য বিশ্বের প্রথম উচ্চতর নির্ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন।
জার্মান-আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন গ্র্যাভিটি সম্পর্কে পরবর্তীতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি দেখিয়েছিল যে, গ্র্যাভিটি স্থান-সময়ের বক্রতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে, এমনকি আলোক রশ্মিও এই বক্রতা অনুসরণ করে এবং বিশাল বস্তু দ্বারা বাঁকা হয়।
আইনস্টাইনের তত্ত্বগুলি ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুমান করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল কিন্তু ব্ল্যাকহোলের আশেপাশে, নিউটনের গ্র্যাভিটির তত্ত্বগুলো কীভাবে বস্তুগুলি সরায় তা সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারে না, বরং এক্ষেএে আইনস্টাইনের টেনসর ক্ষেত্রের সমীকরণগুলো কাজে আসে।
বিজ্ঞানীরা অনেক কারনেই গ্র্যাভিটি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। পদার্থবিজ্ঞানের একটি কণা সম্পর্কিত স্ট্যান্ডার্ড মডেল, যা প্রায় সমস্ত পরিচিত কণার ক্রিয়াকলাপ বর্ণনা করে, কিন্তু গ্র্যাভিটি ছাড়া। আলো, ফোটন নামক একটি কণা দ্বারা বহন করা হয়, তবে মহাকর্ষের জন্য এমন কণা আছে কিনা তা পদার্থবিদদের ধারণা নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে এটিকে গ্র্যাভিটন বলা হবে।
কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে তাত্ত্বিক কাঠামোয় গ্র্যাভিটিকে একত্রিত করা, বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানের অনন্য আবিষ্কার, যা এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
তবে গ্র্যাভিটির জন্য অবিশ্বাস্য কিছু আবিষ্কার আরোও নতুন কিছু উদঘাটনের জন্য কাজে এসেছে। ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে, জ্যোতির্বিদ ভেরা রুবিন এবং কেন্ট ফোর্ড দেখিয়েছিলেন যে গ্যালাক্সির কিনারায় থাকা তারকারা যতটা সম্ভব দ্রুত গতিতে ঘুরছিল। এটি এমন ছিল যেন কিছু অদেখা ভর তাদের উপর মহাকর্ষীয়ভাবে ঝুঁকছে, যা এমন একটি উপাদান এর খোঁজ দিয়েছে, যেটি আমরা এখন ডার্ক ম্যাটার বলে চিনি।
বিজ্ঞানীরা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার আরেকটি ফলাফল দেখতে পেরেছিলেন। যখন নিউট্রন স্টার এবং ব্ল্যাকহোলের মতো বিশাল বস্তু একে অপরের চারদিকে ঘোরে তখন মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলি নির্গত হয়। ২০১৭ সাল থেকে, লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি (এলআইজিও) এইসব ঘটনা থেকে অত্যধিক তথ্য সংকেত শনাক্ত করে মহাবিশ্বের জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
মাইশা আমিন/ নিজস্ব প্রতিবেদক