কোন একটি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং কঠিন। সম্প্রতি, বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এ উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, বিভিন্ন মেকানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা আর বিভিন্ন ভাষার দক্ষতা অর্জনের ভেতর সরাসরি আমাদের মস্তিষ্ক তে সম্পর্ক আছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে যে, মস্তিষ্কের যে অংশটি বিভিন্ন ধরণের ভাষাগত কার্যকলাপের সাথে যুক্ত, যেমন শব্দের মানে বোঝা, সেটি আবার সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতাও নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে, মস্তিষ্ক-র ভাষার দক্ষতা-সম্পর্কিত অংশটির কার্যক্রম তখন বেশী ছিলো। আর আমরা জানি, তখন বেঁচে থাকার টানেই মানুষের মাঝে যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ হওয়া অবধারিত ছিলো।
২০১৯ সালে ফ্রেঞ্চ গবেষক ক্লডিও ব্রজলি, সিএনআরএস রিসার্চার এলিস সি. রয় এবং তাদের দল দেখিয়েছেন যে যেসব ব্যক্তি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পারদর্শী, তারা অধিকাংশ সময়ই সুইডিশ শব্দ গঠনেও অন্যদের থেকে ভালো করেছে।
এ ব্যাপাটিকে আরো গভীরভাবে বোঝার জন্য ওই একই দল আরেকটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা প্রথমে অংশগ্রহণকারীদেরকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা প্লায়ার্স দিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে দেন, আর তারপর ফ্রেঞ্চ-এ বাক্য গঠনের কয়েকটি অনুশীলন করতে বলেছিলেন।
অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের এমআরআই-এর মাধ্যমে দেখা যায়, দুইটি কাজই করার সময় মস্তিষ্কে “বেসাল গ্যাংগ্লিয়া (basal ganglia)” নামক এক অঞ্চলে কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়, আর কার্যক্রমের বিন্যাসও ছিলো একই রকম।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে- একটির মাধ্যমে কী আরেকটিতে দক্ষতা বাড়ানো যায়? যেমন, নিজের মস্তিষ্ক-কে যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পারদর্শী করে তুললে কী একটি ভাষার দক্ষতা বা ভাষাটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষমতাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যাবে? এ প্রশ্নটি মাথায় নিয়েই বিজ্ঞানীরা দ্বিতীয় একটি গবেষণা করেছেন, এবং প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর পেয়েছেন।
এবার অংশগ্রহণকারীদেরকে প্লায়ার্স ব্যবহার করার ৩০ মিনিট আগে এবং পরে একটি ফ্রেঞ্চ বাক্য গঠনের অনুশীলন করতে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীরা গড়ে প্লায়ার্স ব্যবহার করার আগের অনুশীলন থেকে পরের অনুশীলনে বেশী ভালো করেছে।
আবার এর উল্টোটিও সত্য। ভাষা-সম্পর্কিত অনুশীলন করার পর অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার পারদর্শিতা বেড়ে গেছিলো।
বিজ্ঞানীদের এখন মূল চেষ্টা কীভাবে তাদের পাওয়া এ ফলাফলগুলোকে মানুষের কাজে লাগানো যায়। ব্রজলি বলেন, “কীভাবে এটি ব্যবহার করে আমরা ডেভেলপমেন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডিসঅর্ডার-এ ভোগা রোগীদের ভাষাগত দক্ষতা ফিরিয়ে আনতে পারি তা চেষ্টা করছি। এছাড়াও এগুলো সময়ের সাথে সাথে ভাষা কীভাবে প্রবর্তিত হয়েছে তা আমাদেরকে বুঝতে অনেক সাহায্য করবে।”
হাসিনাত রিফা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সায়েন্স ডেইলি
+1
+1
+1
+1
+1
+1
+1