কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, অ্যাস্ট্রোসাইট (astrocytes) হিসাবে পরিচিত তারকা-আকৃতির মস্তিষ্কের কোষগুলি আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যা থেকে আমাদের ঘুমিয়ে পড়া এবং জাগ্রত হওয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরো সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন।
ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির এলসন এস ফ্লয়েড কলেজ অফ মেডিসিনের গবেষকদের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি করা হয়। আমরা কেন ঘুমাচ্ছি এবং মস্তিস্কে ঘুম কীভাবে কাজ করে তার রহস্য সমাধানের চূড়ান্ত দিক ও নতুন গতি তৈরি করেছে এই গবেষণাটি। আবিষ্কারটি অনিদ্রা, স্নায়ুজনিত রোগ এবং অনিয়মিত ঘুমের সাথে জড়িত অন্যান্য অবস্থার যেমন- পিটিএসডি, হতাশা, আলঝেইমার ডিজিজ এবং অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের মত সমস্যা গুলোর সম্ভাব্য চিকিৎসা কৌশলগুলির আবিষ্কার ও ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।
লিড লেখক এবং পোস্টডক্টোরাল গবেষণা সহযোগী অ্যাশলে ইনজিওসি বলেছিলেন,”আমরা ঘুম সম্পর্কে যা জানি তা মূলত নিউরনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে”। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, নিউরনগুলি বৈদ্যুতিন সংকেতগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ করে যা ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফির (ইইজি) মাধ্যমে সহজেই ধরা যায়। কিন্তু অ্যাস্ট্রোসাইটস- এক ধরণের গ্লিয়াল (আঠালো) কোষ যা নিউরনের সাথে যোগাযোগ করতে বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহার করে না বরং তাদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যালসিয়াম সিগন্যালিং নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া কাজ করে।
স্নায়ুবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বিভিন্ন প্রক্রিয়াতে তাদের সম্ভাব্য গবেষণাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছেন। ইনজিওসি বলেছেন, “কয়েকটি গবেষণা থেকে জানা যায়- অ্যাস্ট্রোসাইট গুলি ঘুমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তবে তাদের ক্যালসিয়াম সিগন্যালিং এখনও সম্পূর্ণভাবে মনিটর করার মত সরঞ্জামগুলো নেই।”
গবেষক দল তাদের গবেষণার কাজে তন্দ্রাচ্ছন্ন ইঁদুর, ঘুমন্ত ইঁদুর ও একটি ইঁদুরের পরিমিত ঘুম শেষে তাকেও পর্যবেক্ষণ করেছিলো। তারা একটি ফ্লুরোসেন্ট ক্যালসিয়াম সূচক ব্যবহার করেছিলেন, যা ক্ষুদ্র মাউন্ট করা মাইক্রোস্কোপগুলোর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। তারা ইদুরগুলোর মস্তিষ্ক সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন।
ফ্রন্টাল কর্টেক্সে অ্যাস্ট্রোসাইট মস্তিষ্কের এমন একটি ক্ষেত্র যা ঘুমের প্রয়োজনের পরিমাপযোগ্য ইইজি পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অ্যাস্ট্রোসাইটের ক্রিয়াকলাপ ঘুম ও জাগরণ চক্র জুড়ে নিজ গতিতে পরিবর্তিত হয়। নিউরনের ক্ষেত্রেও এ পরিবর্তন সত্য। যা থেকে তন্দ্রাচ্ছন্ন ও জাগ্রত অবস্থায় (অ্যাস্ট্রোসাইটের) নিখুঁত পার্থক্য পাওয়া যায়।
ইনজিওসি বলেছিলেন, ঘুম এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণে অ্যাস্ট্রোসাইটগুলির ভূমিকা আরও উন্মোচিত করার জন্য আরও গবেষণা করা দরকার। তিনি মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে অ্যাস্ট্রোসাইটের ক্যালসিয়াম ক্রিয়াকলাপ অধ্যয়ন করার পরিকল্পনা করেছেন যা ঘুম এবং জাগরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হিসাবে ধরা হয়।
সিনিয়র লেখক এবং বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সের প্রফেসর মার্কোস ফ্র্যাঙ্ক বলেছিলেন, ‘আমাদের গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে আমরা হয়তো 100 বছরেরও বেশি সময় ধরে ভুল জায়গায় এই পার্থক্যের অস্তিত্ব খুঁজছি। এই গবেষণাটি প্রমাণ দেয় যে, আমরা কীভাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন হই এবং কেন ঘুমাই, এবং তা বোঝার পাশাপাশি ঘুমের ব্যাধি এবং অস্বাভাবিক ঘুমের সাথে জড়িত অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও এই গবেষণার ফলাফল সহায়তা করবে।
মাহফুজ আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সাইটেক ডেইলি, কারেন্ট বায়োলজি জার্নাল