পৃথিবী ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দূষণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মহামারি ইত্যাদি কারণে অদূর ভবিষ্যতে মানুষের পক্ষে পৃথিবীতে বাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই মানুষ নতুন গ্রহে বসতি স্থাপনের কথা ভাবতে শুরু করেছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে কাছের ও সহজ সমাধান হলো মঙ্গল৷ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাসের বিষয়টি গবেষণার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তবে সম্প্রতি মঙ্গলের প্রথম বাসিন্দা সংক্রান্ত বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে যে মঙ্গলের প্রথম বাসিন্দা হিসেবে মাত্র ২২ জন মানুষ নিয়েই শুরু করা যাবে বসবাস। গবেষণায় উঠে এসেছে যে ন্যূনতম ২২ জনের একটি কলোনিই হবে সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং বসবাসের ক্ষেত্রে এটি একটি ভারসাম্য ধরে রাখবে।
আমেরিকার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন যে, মঙ্গলে বসবাস শুরুর ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সম্মুখীন আমাদের হতে হবে ও তার সমাধান কি। কত জন মানুষ কে প্রথমে পাঠানো প্রয়োজন? যারা যাবে তাদের বয়স সীমা কত হতে হবে? ন্যূনতম ২ বছর থাকার জন্য কি কি রসদ লাগবে? বসবাস করার জন্য কেমন আদর্শ পরিবেশ প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয় জানাই ছিল গবেষণার মূল লক্ষ্য।
কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বয়সসীমা ও নভোচারীর সংখ্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় মাথায় রাখা হয়েছে। মঙ্গলে প্রথম দিকে যারা বসতি স্থাপনের জন্য যাবেন তাদেরকে একটি বদ্ধ পরিবেশে বাস করতে হবে। নতুন নতুন নানা সমস্যার সম্মুখীন হবেন তারা। জনসংখ্যা বৃদ্ধিতেও তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। ন্যূনতম ২ বছর থাকার জন্য খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় রসদ এর পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকবে। এইসব উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলোকে কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।
গবেষক দল লক্ষ্য করেছেন যে যান্ত্রিক এই সমস্যা গুলো ছাড়াও বদ্ধ পরিবেশে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে নভোচারীরা মানসিক নানা সমস্যার সম্মুখীন হবেন। সিমুলেশন এর সাহায্যে তাই বিজ্ঞানীরা ৪ প্রকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন যা সেখানকার পরিবেশের সাথে ভালোভাবে খাপ খাওয়াবে। এগুলো হলো : স্নায়ুবিক, প্রতিক্রিয়াশীল, সমাজিক ও সম্মতিসূচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এই গুণাবলি নভোচারীদের মানসিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে সক্ষম হবে। সেই সাথে কঠিন পরিবেশে তাদেরকে একটি আদর্শ দল হিসেবে একসাথে কাজ করতে সক্ষম হতে হবে। সবাইকে খুব দক্ষ ও অভিজ্ঞতাপূর্ণ হতে হবে।
তবে সব কিছুর পূর্বে একটি মঙ্গলে বসবাসে উপযোগী একটি টেকসই পরিবেশ ( বাড়ি, রসদ, জ্বালানি, অক্সিজেন, খাদ্য ইত্যাদি) তৈরি করা প্রয়োজন। আপনারা ইতোমধ্যেই জেনে থাকবেন ইলন মাস্কের Space X মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাতে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। নিত্য নতুন এসব গবেষণা মানুষকে অদূর ভবিষ্যতের জন্য জন্য আরো বেশি প্রস্তুত করে তুলছে।
মুরছালিন রহমান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: স্পেস, নিউ ইয়র্ক পোস্ট