শরীরের বাহিরের কোনো আঘাত, জখম অথবা দেহের ভেতরেই ছোট থেকে ছোট কোন ত্রুটি। অসুস্থ হবার যন্ত্রণা মানুষ অনুভব করে তীব্রভাবে। জীবনের সকল রকম আয়োজন তাই সুস্থতাকে ঘিরে।
তবে অসুস্থতা শুধু মানুষের জন্য নয়। কথা বলতে না পারা অবলা প্রাণীগুলোও অসুস্থ হয়। রোগে তাদেরও মৃত্যু ঘট। আমি-আপনি অসুস্থ হলেও কথা বলতে পারি, শরীরের অস্বস্তির কথা জানাতে পারি অন্যকে। কিন্তু বোবা প্রাণীগুলোর সে সুযোগ নেই। তাই প্রাণীদের চিকিৎসা দিতে হয় অনেক বেশি স্নেহ দিয়ে।
অবলা প্রাণীদের ভালো রাখা, এদের যত্ন আর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য যে একদল মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন তারাই ভেটেরিনারিয়ান বা ভেটেরিনারি ডাক্তার। বিশ্বের অনেক দেশে তাদের শুধু ভেট বলেও ডাকা হয়৷ ভেটেরিনারি সায়েন্স হচ্ছে মেডিকেল সায়েন্স এর একটি শাখা যেখানে প্রাণীর রোগ নির্ণয় ও এর প্রতিকার এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হয়।
ভেটেরিনারি সায়েন্স এর শাখা ব্যপকভাবে বিস্তৃত। পৃথিবীর সমস্ত পশু-পাখি (গৃহপালিত বা বন্য), সরীসৃপ, উভচর এমনকি মাছের চিকিৎসা দেয়ার যোগ্যতা থাকতে হয় একজন ভেটেরিনারিয়ান এর। চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাণীর বাসস্থান, স্বাস্থ্যকর খাবার, রিপ্রোডাকশন নিয়েও ভেটেরিনারি সায়েন্স এ গবেষণা হয়। এছাড়াও ভেটেরিনারিয়ান সায়েন্স এর অন্যতম লক্ষ্য বিভিন্ন বন্য প্রাণীর রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা।
ভেটেরিনারি ডিগ্রী কি ডাক্তারি ডিগ্রীর সমতুল্য?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, পুরো পৃথিবীতে এই সংক্রান্ত প্রায় সাড়ে চারশ ডিগ্রী চালু রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ডাক্তারি ডিগ্রী। পেশাদার ভেটেরিনারিয়ানদের ট্রেনিংকে দুটো পর্যায়ে ভাগ করা হয়। প্রথমটি ব্যাসিক সায়েন্স যেখানে অ্যানাটমি (অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা), ফিজিওলজি (শারীরতত্ত্ব), প্যাথলজি (রোগতত্ত্ব), ফার্মাকোলজি (ঔষধ বিজ্ঞান), মাইক্রোবায়োলজি (অণুজীব বিজ্ঞান), নিউট্রিশন (পুষ্টি বিজ্ঞান) এবং পাবলিক হেলথের মতো বিষয়গুলোর ল্যাব এবং থিওরি ক্লাস করানো হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে মূলত ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলো শেখানো হয়। যেখানে রয়েছে মেডিসিন, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি, অবসট্রেটিক্স (ধাত্রীবিদ্যা), অ্যানেশথেসিওলজি (অবচেতনবিদ্যা), সার্জারিসহ বিভিন্ন বিষয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ ভেটেরিনারি মেডিসিন এর ডাক্তারি ডিগ্রী চালু রয়েছে।
প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নির্মমতা পরিহার ও এই সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতি বছর পালিত হয় বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস। এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভেটেরিনারি কর্মীগণ এই দিনটি পালন করেন।
এ বছর বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসের থিম নির্ধারিত হয়েছে ”Strengthening Veterinary Resilience“. এর দ্বারা ভেট ডাক্তার ও ভেট কর্মীদের জন্য তাদের মিশনের সর্বোচ্চ সহায়তা নিশ্চিতের কথা এসেছে। ২০২১ সালে ভেটেরিনারি দিবস এর থিম ছিল “Veterinarian response to the COVID-19 crisis.“
সায়েন্স বী এর পক্ষ থেকে সকল ভেটেরিনারিয়ান যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল প্রাণী।
মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক