“গেইম খেলার রয়েছে অনেক উপকারিতা” এই কথাটা শোনার পর অনেকেই হয়তো ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন। আমাদের এরকম অনুভূতির কারণ হচ্ছে ইতিমধ্যে আমরা গেইম খেলার অনেক অপকারিতা সম্পর্কে জানলেও গেইম বা ভিডিও গেমস খেলারও যে উপকারিতা থাকতে পারে সে ব্যাপারে আমরা অনেকটাই অজ্ঞ। তবে সত্যি এটাই যে, গেইম খেলারও রয়েছে বিভিন্ন উপকারি দিক এবং এগুলা খুবই কার্যকরীও বটে। তাহলে চলুন আজ জেনে নেই গেইম খেলার বিভিন্ন উপকারি দিক সম্পর্কে।
গেইম আমাদের মানসিক ভাবে একটিভ করে তুলে :
এটা শোনার পর অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এক টানা বসে থেকে ভিডিও গেইম খেলে মানুষ কিভাবে একটিভ হয়ে উঠতে পারে? তবে আসলেই এটাই ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, একশন ভিডিও গেইম গুলো যেখানে একটার পর একটা পার্ট আসতে থাকে সেই গেইমগুলো বেশি করে খেললে দৃষ্টিশক্তি আরো প্রখর হয়ে ওঠে। রাতের বেলা বই পড়া এবং গাড়ি চালানোর মত ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। একদিকে নিজের মনোযোগ দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে হয় বলে অন্যান্য কাজেও এর কার্যকরী দিক লক্ষ করা যায়।
এছাড়াও আরো অনেক শিক্ষামূলক ভিডিও গেইম আছে যা থেকে আমরা শিখতে পারি বিপদের মুহূর্তে কিভাবে আমরা তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। যার ফলে বাস্তব জীবনেও আমরা কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। এজন্যই বলা হয় ভিডিও গেমস খেলার ফলে আমরা মানসিক ভাবে শক্তিশালী এবং একটিভ হয়ে উঠি। তাছাড়া ভিডিও গেমস আমাদের মস্তিষ্ককে সৃজনশীল হতে সহায়তা করে।
একাকীত্ব দূর হয় :
বর্তমান জেনারেশনের জন্য একাকীত্ব, ডিপ্রেশন এগুলো রোজকার একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। আর এখনকার করোনা পরিস্থিতির জন্য মানুষ আরো বেশি একা হয়ে গেছে। এই সময়ে একাকীত্ব দূর করতে ভিডিও গেমস একটি দারুণ কার্যকরী পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিডিও গেইম খেলার সময় মানুষ গেইমের প্রতি এতোটাই মনোযোগ থাকে যে, একাকীত্বটা সেইভাবে অনুভব করে না।
ভিডিও গেইমে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার ফলে বাইরের কষ্ট মন খারাপ গুলো এতোটা ছুঁতে পারে না। পাশাপাশি গবেষণায় দেখা গেছে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি কিছু গেইম মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও থেরাপির থেকেও ডিপ্রেশন দূরীকরণে বেশি কার্যকরী।
স্মৃতিশক্তি প্রখর করে :
সাধারন ভাবে যে ভিডিও গেইম গুলো তৈরি করা হয় এসব খেলার যে পদ্ধতি থাকে এবং একটার পর একটা স্টেপ থাকে সেসব মনে রাখতে হয়। ফলে মস্তিষ্কে স্মৃতি ধরে রাখার একটা দক্ষতা তৈরি হয়। তাছাড়া বর্তমানে শিক্ষামূলক এবং পাঠ্যপুস্তকের সাথে মিল রেখে অনেক ভিডিও গেইম তৈরি করা হয়, যেগুলো খেলার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিরও অনেক উন্নতি লাভ হয়।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে :
আপনারা হয়তো এতোদিন শুনেই এসেছেন যে কম্পিউটার এর সামনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়। আসলেই যখন কম্পিউটার স্কিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকেন তখন কম্পিউটার এর ভিতর থেকে যে আলোক রশ্মি আসে তা আমাদের চোখের জন্য বিপজ্জনক। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিডিও গেইম খেলার ফলে আমাদের চোখের দ্রুত ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহ ট্র্যাক করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি একাধিক বস্তু ট্র্যাক করার মত ক্ষমতাও আগের তুলনায় উন্নত হয়।
সামাজিক হতে শিখায় :
অনেক ইন্ট্রোভার্ট আছে যারা বেশি লোকজন বন্ধুবান্ধব এড়িয়ে চলে আপন মনে বসে বসে গেইম খেলে। এখনকার যে ভিডিও গেইম গুলো রয়েছে তার বেশিরভাগই অনলাইন ভিত্তিক যেখানে আপনি গেইম খেলার পাশাপাশি আপনার প্রতিপক্ষের সাথে কথাও বলতে পারবেন। আর গেইম খেলার সময় আপনি এতোটাই আবেগ আছন্ন থাকেন যে সহজেই মনের ভাব প্রকাশ করে ফেলেন।
যার কারণে আপনার মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়, সবার সাথে মিশতে পারেন। আর বেশিরভাগ গেইম হয়তো আপনার টিমের সাথে খেলতে হয় এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ এবং তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
সর্বোপরি সব জিনিসেরই একটা ভালো দিক এবং খারাপ দিক রয়েছে। তাই এমন ভাবে গেইম খেলা উচিৎ না যেইটাতে আমি আসক্ত হয়ে পরবো তাহলে হিতে-বিপরীত হবে। তাই মন ভালো রাখতে, সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে গেইম খেলাই যায়, তবে মনে রাখতে হবে, কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না।
তামান্না রশিদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ understood , GEICO