বর্তমান বিশ্বে ভিডিও গেইমস অত্যধিক জনপ্রিয় বিভিন্ন বয়সী মানুষের মাঝে। পিসি/ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোনে নিত্য এই গেইমিং এ আমরা আসক্ত অনেকেই। ভিডিও গেইমস হচ্ছে মূলত একটি ইলেক্ট্রনিক গেইমস, যা ব্যবহারকারী ও ডিভাইসের মাঝে একটি পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বর্তমানে যেসকল ভিডিও গেইমস ও গেইম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অধিক জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্যঃ XBox, Playstation, Nintendo, Wii, PUBG, Free Fire, Among us, Clash of Clans ইত্যাদি।
এই ভিডিও গেইমিং এর গোড়া পত্তন হয়েছিলো মূলত ১৯৪০-এর দশকে ‘থমাস টি. গোল্ডস্মিথ জুনিয়র’ ও ‘এস্টেল রে ম্যানন‘ এর হাত ধরে। পরবর্তীতে আশির দশকে আর্কেড, কনসোল, হোম কম্পিউটার ইত্যাদি গেইমসের সাথে পরিচিত হয়ে সাধারণ মানুষ এবং এই অব্দি তা আধুনিক সংস্কৃতি ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম বলে পরিগণিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, “স্পষ্টত বিনোদনের এই অন্যতম মাধ্যম ‘ভিডিও গেইমিং’ এর সাথে জড়িত বিশ্বের বিভিন্ন ভিডিও গেমাররা তাদের পিসি/ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোন স্ক্রিনের সামনে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ বিলিয়ন ঘন্টা সময় ব্যয় করছে। গেইমিং এর এই ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও বিস্তৃতি বিজ্ঞানীদের এই গেইমিং এর ফলে মানব মস্তিষ্ক ও আচরণের উপর এর প্রভাব ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক তা ভাবতে বাধ্য করছে।”
বিভিন্ন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ এই ভিডিও গেইমিং এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দু’রকমের প্রভাবের কথাই তুলে ধরেছে। তবে কি গেইমিং সত্যই উভয় সংকট? আসুন জেনে নেয়া যাক।
একটি নতুন গবেষণায় ভিডিও গেইমিং এর ইতিবাচক দিক রুপে এটা ফুটে উঠেছে যে একজন বাচ্চা যে নিয়মিত ভিডিও গেইমস খেলে তা কয়েকবছর পরেও তার কাজের স্মৃতিতে এবং মনোযোগে ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়। উক্ত গবেষণায় রিসার্চার টিমটি কয়েকজন ভিডিও গেইমার ও নন-গেইমার দের নিয়ে একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা চালায় ও দেখা যায় মস্তিষ্ক কিংবা বিভিন্ন জ্ঞানীয় দক্ষতার দিক থেকে ভিডিও গেইমাররা অনেকটাই এগিয়ে অর্থাৎ ইতিবাচক ফলাফল।
এছাড়াও ভিডিও গেইমস খেলে মস্তিষ্ক কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে উন্নতিলাভ করে ও শুধু তাই নয়, তাদের মস্তিষ্কের গঠনও পরিবর্তনে সাহায্য করে। একজন নন-গেইমারের তুলনায় গেইমাররা মনোযোগ, নির্বাচনী দক্ষতায় উন্নতি প্রদর্শন করে তদুপরি মস্তিষ্কের যে অংশ মনোনিবেশে ভূমিকা রাখে তাতেও উন্নতি ঘটায়।
TMS (Transcranial Magnetic Stimulation) হচ্ছে মস্তিষ্ক উদ্দীপনার একটি ননইনভেইসিভ ফর্ম যা পরিবর্তিত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে তড়িৎ চৌম্বকীয় আবেশ দ্বারা নির্দিষ্ট অঞ্চলে বৈদ্যুতিক সিগনাল সৃষ্টি করে থাকে। মস্তিষ্কের এই “TMS” ও ভিডিও গেইমিং এর দুই ধরণের প্রতিক্রিয়ায় কার্যকরী হিসেবে সামগ্রিকভাবে সীমিত পরিবর্তন ও ফলাফল (কাজের স্মৃতিশক্তি মনোযোগের সময়কাল, ভিজ্যুস্পেসিয়াল দক্ষতা) দেখায় যা কেবল এই ভিডিও গেইমের প্রশিক্ষণের ফলেই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী লাভ অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় অব্দি এর ফলাফল স্থায়ী হওয়াই গেইমিং এর ইতিবাচক দিক। এই ইতিবাচক ব্যাপার এর ফলস্বরূপ গবেষণা দল এটা নিশ্চিত করেন যে, কয়েকজনের মধ্যে ভিডিও গেইমিং এ অভিজ্ঞ/ অনভিজ্ঞদের মধ্যে থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা প্রাসঙ্গিক উদ্দীপনাগুলোতে মনোনিবেশে অত্যন্ত কার্যকর এবং ভিডিও অনস্ক্রিন পরিবর্তনসমূহও খেলা বন্ধ বা ছেড়ে দেওয়ার পরেও বছরের পর বছর তাদের মধ্যে কার্যকর থাকে।
এছাড়াও কৌশল ভিত্তিক গেইম গুলোর তৈরীকারকদের দাবী, এই গেইম গুলো বয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এবং ‘ডিমেনশিয়া‘ ও ‘আলঝাইমার‘ রোগের বিরুদ্ধে মস্তিষ্ককে প্রতিরক্ষা দেয়। তারা এ নিয়ে এখন ও কাজ ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে যে, গেইমিং এর কোন ব্যাপারগুলো মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের অংশে প্রভাব ফেলছে।
তবে অতিরিক্ত গেইমিং আসক্তি হয়ে উঠতে পারে অভিশাপ। অতিরিক্ত ভিডিও গেইমিং আসক্তি ‘Internet Gaming Disorder‘ নামে পরিচিত। উপরে দুটি রোগের উল্লেখ রয়েছে ‘ডিমেনশিয়া’ ও ‘আলঝাইমার’ যা এই ডিজঅর্ডারের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ভিডিও গেইমের এক্সপোজার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তার প্রভাব সর্বদা বাস্তব জীবনে পরিবর্তন দেখায় না। তাই এই অতিরিক্ত আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী।
গেইমিং কিভাবে আমাদের মস্তিষ্কের উপরে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা এখনও চলমান। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এদের মধ্যকার রহস্য ও যোগসূত্রসমূহ স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং আশা রাখছি যে সমস্ত নেতিবাচক দিক ছাপিয়ে গেইমিং প্রযুক্তি দ্বারা আমরা উপকৃত হবো।