Escherichia coli বা E. coli এমন একটি ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত আমাদের অন্ত্রের ট্র্যাক্টে পাওয়া যায় এবং এই ব্যাকটেরিয়াটি সেখানে কোনো ক্ষতি ছাড়াই থাকতে পারে। তবে এটি যদি খাবারে থাকে এবং সেই খাবার আমরা খেয়ে ফেলি তবে সেটি আমাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
E. coli এর বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যা এক ধরনের টক্সিন (বিষ) তৈরি করে। এই টক্সিন আমাদের দেহে কখনো কখনো মারাত্মক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে এমন কিছু E. coli প্রজাতি রয়েছে যা মানুষের উপকার করতে পারে। কিছু গবেষণার ক্ষেত্রে প্রায়শই এদের ব্যবহার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে একটি ই-কোলাই উপকারী প্রোবায়োটিক হিসাবে পরিচিত যাকে বলা হয় E. coli Nissle 1917। E. coli অনেক প্রকারের হতে পারে। গবেষকরা এখন দেখতে পেয়েছেন যে E. coli Nissle টি প্যাথোজেনিক ই-কোলাই এর ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। যেমন: এর মধ্যে আছে E. coli 0157:H7 হিসেবে পরিচিত একটি খাদ্যজনিত দূষক।
এমবিও তে প্রতিবেদন করা সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা অরগানয়েড এবং ত্রিমাত্রিক সেল কালচার মডেল ব্যবহার করে এই ব্যাকটেরিয়ার গঠন তৈরি করে দেখেছেন যে E. coli Nissle কিভাবে E. coli 0157:H7 এর সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। এই ক্ষেত্রে অর্গানয়েডগুলি দিয়ে মানুষের অন্ত্রের মডেল তৈরি করা হয়।
এর থেকে তারা দেখতে পান যে প্যাথোজেনিক প্রজাতির ই-কোলাই সংক্রমণ এর ফলে অন্ত্রের টিস্যুর এপিথেলিয়াল স্তরটি নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু অন্যদিকে Nissle অন্ত্রে কোনো ক্ষতি করে নি। তবে রোগজীবাণু গুলো যদি প্যাথোজেনিক প্রজাতির ই-কোলাইতে সংক্রমণ এর পূর্বে Nissle নামক ই-কোলাই তে আক্রমণ করতো তবে টিস্যু গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতোনা।
সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স, বায়োকেমিস্ট্রি এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন অধ্যাপক আলিসন ওয়েইস এর মতে, “Nissle নামক ই-কোলাই টি প্যাথোজেনিক E. coli কে মারে না। বরং এটি আপনার অন্ত্রে প্রতিক্রিয়াগুলি ছড়িয়ে দেয় এবং অন্ত্রে আক্রমণকারী সম্ভাব্য প্যাথোজেনগুলির জন্য আপনাকে প্রস্তুত করে। এটি কিভাবে হয় তা এখনো বিজ্ঞানীরা জানেন না, তবে গবেষণা অনুযায়ী মানুষের কোষে এর কার্যকারিতা দেখা যায়। আমরা আশা করছি যে এই ভালো ব্যাকটেরিয়াটি কিভাবে কাজ করে তা আমরা দ্রুত নির্ধারণ করতে পারবো।”
ই-কোলাই এর বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। তারা একটি সম্পূর্ণ জায়গা থেকে জিন সংগ্রহ করে এবং অন্যান্য প্যাথোজেনগুলির পুরো এক গুচ্ছ চ্যানেল তৈরি করে। এমন কিছু ব্যাকটেরিয়াও রয়েছে যারা মূত্রনালীর সংক্রমণ করতে পারে। বিশেষত ক্ষতিকর E.coli তে অতিরিক্ত জিন রয়েছে যার সাহায্যে তারা নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে ভাল ই-কোলাইতে এই জিনগুলি নেই এবং তারা দেহের কোনো ক্ষতি করতে পারেনা।
খারাপ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং তাদের দ্বারা সৃষ্ট অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য Nissle নামক উপকারী ই-কোলাই টি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কিভাবে হবে তা দেখার জন্য অধ্যাপক আলিসন ওয়েইস অনেক আগ্রহী। ধারণা করা হয় যে ই-কোলাই সংক্রমণের কারণে প্রতি বছর প্রায় সব বয়সের ২৬৫,০০০ মানুষের মধ্যেই পেট ব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমির কেস দেখা যায়। ছোট বাচ্চারা এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে পারে এবং অনেকে আবার মারাও যায়। এই সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে উল্টো হেমলিটিক-ইউরেমিক সিনড্রোম নামে একটি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
অধ্যাপক আলিসন ওয়েইস এর মতে, “ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ নিরাময়ের কোন উপায় এখনো নেই। আমরা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ফ্লুইড দিতে পারি, তবে এটি সত্যিই মারাত্মক হতে পারে। তবে কিভাবে এটি নিরাময় করা যায় তা বের করা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।” ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া প্রায় সব ধরনের প্রানীই বহন করতে পারে এবং এটি তাদের মলের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
এই ব্যাকটেরিয়া নানাভাবে খাদ্যের সংস্পর্শে আসে, সেই খাবার খেলে পেটে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত মাংস পরীক্ষা করা এখনো কঠিন তবে অসম্ভব নয়। এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মাংস খাওয়ার আগে ভালো করে রান্না করে নেওয়া। তবে ই-কোলাই লেটুসের মতো কাচা সবজিতেও পাওয়া যায় এবং এটি সনাক্ত করা বা দূর করা তুলনামূলক কঠিন। সেক্ষেত্রে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়াই উত্তম সমাধান।
নিশাত তাসনিম/ নিজস্ব প্রতিবেদক