মনে করুন আজ দুপুরে আপনার বাসায় সাত রকমের ভর্তা বানানো হয়েছে এবং আপনি লোভ সামলাতে না পেরে গোসলের আগেই প্লেট নিয়ে বসে পড়লেন খাবার টেবিলে। চিন্তা করলেন আগে খেয়েই নেওয়া যাক, খাওয়ার পরে না হয় গোসল করতে যাবো! এখন একটু ভাবুন তো ভরা পেটে গোসল করা কি উচিত? এটি করলে কী আমাদের কোনো ক্ষতি হবে? সত্য হলো ভরা পেটে গোসল করলে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা অসুবিধা। ভাবছেন, গোসলের সাথে পেট ভরা না খালি তার কী সম্পর্ক?
চিকিৎসকরা খাওয়ার পরে সাধারণত গোসল করতে নিষেধ করেন। অনেকসময় গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে হজম প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়ার কারণে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন ঘটলে তা আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। রক্তচাপের আকস্মিক উঠানামার সঙ্গে সঙ্গে হার্টের সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ে।
যখন আপনি গোসল করেন, তখন হাইপারথার্মিক অ্যাকশন নামে একটি প্রক্রিয়া আপনার শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াটি আপনার অভ্যন্তরীণ শরীরের তাপমাত্রা এক বা দুই ডিগ্রি বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ অর্থে, হাইপারথার্মিক অ্যাকশন আপনার জন্য ভালো হতে পারে। কারণঃ
১. হাইপারথার্মিক অ্যাকশন এর ফলে আপনার শরীরে ইমিউন সিস্টেম উদ্দীপিত হতে পারে।
২. আপনার স্নায়ুতন্ত্র শিথিল হয়ে যেতে পারে।
৩. এবং আপনার ঘামের গ্রন্থিগুলিকে টক্সিন বের করতে উৎসাহিত করে থাকে।
সাধারণত খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় কারণ খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীর পাচক অঙ্গগুলিতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় আমাদের পরিপাক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে ক্রিয়াশীল হয়। তবে খাওয়ার পর গোসল করলে আপনার শরীর বিভ্রান্ত হয়ে যাবে, কারণ এতে আপনার পাচনতন্ত্রের সেই রক্ত প্রবাহের পরিবর্তে, আপনার শরীর পানির কারণে হাইপারথার্মিক ক্রিয়া অনুভব করতে থাকবে।
তাত্ত্বিকভাবে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে ধীর করে দিবে। তবে এর সাপেক্ষে বা বিপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে আপনি যদি এই থিওরি মেনে নেন, তবে খাওয়ার পর গোসল করার কথা একেবারেই ভুলে যান।
পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার পর গোসলের অভ্যাস ভবিষ্যতে হজমের গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এসব সমস্যা এড়াতে খাওয়ার পর গোসলের অভ্যাস ত্যাগ করুন।
খাবার ঠিক মতো হজম করতে রক্ত প্রবাহ ঠিক মতো হওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু খাবার খেয়েই যদি কেউ গোসল করেন তাহলে এই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। ফলে বদ-হজম হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে য়ায়। তাই তো খাবার খাওয়ার কম করে ২০ মিনিট পরে গোসল করা উচিত, তার আগে নয়! তবে যদি ঝুঁকি এড়াতে চান তবে গরম পানি দিয়ে গোসল করার বদলে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে করে আপনার পাচক অঙ্গগুলোর রক্ত প্রবাহের ফলে উৎপন্ন তাপ বাধাগ্রস্ত হবে না। পাশাপাশি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে আপনার বিপাক ক্রিয়াও সচল হতে পারে। যার ফলে আরো বেশি পরিমাণে চর্বি কমবে।
মোটকথা, আপনি যদি খাবার খাওয়ার আগে একান্তই গোসলের সুযোগ না পান তবে খাবার গ্রহণের অন্তত ২ ঘন্টা বাদে গোসল করবেন অথবা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। এতে করে এসব সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকবে।
মেহেরিন আফরোজ প্রমিতি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ হেলথ লাইন