রক্তক্ষরণ বিষয়টির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কেননা, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রায়ই আমাদের হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে গিয়ে অনেক সময়ই রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিলেও কারো কারো ক্ষেত্রে এটি হতে পারে ব্লিডিং ডিসঅর্ডার এর মত ভয়াবহ কিছু। সাধারণত একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তজমাট বাঁধতে সময় লাগে ৪-৮ মিনিট। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এ সময় কম বেশি হতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এধরণের সমস্যা দেখা যায়। যেহেতু ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে প্রচুর গ্লুকোজ থাকে তাই কাটা স্থানে দ্রুতই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে। পরবর্তীতে এই ব্যাকটেরিয়া রক্তস্রোতে গিয়ে জন্ম দিতে পারে আরো অনেক জটিল সমস্যার।
এখন আসা যাক Homeostasis এর কথায়। এটি অনেকের কাছে নতুন শব্দ। Homeostasis শব্দটা গঠিত হয়েছে তিনটি ভিন্ন শব্দের সমন্বয়ে। প্রথম অংশ Homeo যার অর্থ একই, ২য় অংশ static যার অর্থ সাম্যাবস্থা এবং শেষ অংশ Osis যার অর্থ প্রক্রিয়া। সম্পূর্ণ শব্দটি দেখলে দাঁড়ায় সাম্যাবস্থা বজায় রাখার প্রক্রিয়া। অবশ্য রক্ত জমাটের সাথে সাম্যাবস্থার কি সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে। চলুন জেনে নিই!
আমাদের রক্তনালী বা নালীকা কেঁটে গেলে রক্তক্ষরণ হয়। সুতরাং সেই স্থান দিয়ে যেসব রক্তকণিকা যাচ্ছে তারা ছিদ্র পথে বের হয়ে আসছে যার ফলে রক্ত প্রবাহের সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই এই সাম্যাবস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই প্রয়োজন। এই লক্ষ্যেই কাজ করে অণুচক্রিকা ও রক্তের ১৩টি ব্লাড ক্লটিং ফ্যাক্টর। এরা সম্মিলিত ভাবে ক্ষতস্থানে প্লাটিলেট প্লাগ তৈরি করে রক্তজালক সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে দেয়।
তবে যাদের ক্ষেত্রে এই ফ্যাক্টর গুলো ঠিক মতো কাজ করেনা জটিলতা দেখা যায় তাদের মধ্যেই। অনেক সময় তাদের শরীরের কোন স্থান কেটে গেলে, মেয়েদের মাসিকের সময়, গর্ভপাত, সন্তান প্রসবের সময়, অথবা কোন মেজর অপারেশন এর ক্ষেত্রে রক্তপাত শুরু হলে বন্ধ হতে চায় না সহজে। যার ফলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
বিভিন্ন কারণে ব্লিডিং ডিসঅর্ডার দেখা যেতে পারে। যেমনঃ খুব কম সংখ্যক লোহিত কণিকার উপস্থিতি, ভিটামিন কে এর অভাব আবার বিভিন্ন ওষুধের প্রতিক্রিয়ার ফলেও এই রোগ হতে পারে। ব্লিডিং ডিসঅর্ডার কারো কারো ক্ষেত্রে বংশগত হতে পারে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হতে পারে অর্জিত।
রক্তক্ষরণ এর বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। তন্মধ্যে বহুল পরিলক্ষিত –
১। হিমোফিলিয়া Aও B: যা মূলত এন্টি হিমোফিলিক ফ্যাক্টর A ও ক্রিস্টমাস ফ্যাক্টর এর কাজ ঠিক মতো সাধিত না হলে হয়ে থাকে। হিমোফিলিয়ার ফলে অধিক ও নিয়ন্ত্রনহীন রক্তক্ষরণ হতে পারে।
২। Von Willebrand’s disease নামে আরেকটি ব্যাধি আছে যা বংশগত। মা-বাবা থেকে এই রোগ সন্তান সন্তুতিতে পরিবাহিত হতে পারে।
রক্তক্ষরণ যে শুধু দেহের বাইরের অংশেই হতে পারে তা নয় বরং দেহের ভেতরে বিভিন্ন অঙ্গে ও তন্ত্রে হতে পারে। যাকে বায়োলজিকাল ভাষায় বলে Internal Bleeding। মস্তিষ্কে ইন্টার্নাল ব্লিডিং হলে সৃষ্টি হতে পারে স্ট্রোক, প্যারালাইসিস এর মতো আরো অনেক জটিলতা।
তাই কোন সমস্যা ধরা পরা মাত্রই দেরী না করে ডাক্তারের পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তারকে নিজের সকল সমস্যা খুলে বলতে হবে। সেই সাথে আগে কোন ডাক্তারের স্বাস্থ্যসেবা কি কারণে গ্রহণ করেছেন সেসব বিষয় জানাতে হবে। তবেই ডাক্তার ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং তার প্রেক্ষিতে ব্লাড টেস্ট ও প্রয়োজনীয় ডায়াগনোসিস এর মাধ্যমে নিশ্চিত হবেন কোন ট্রিটমেন্ট রোগীর জন্য উপযুক্ত। যথাযথ ট্রিটমেন্ট এর মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। তবে অবহেলা করলে শেষ পরিণতি মৃত্যুও হতে পারে। ব্লিডিং ডিসর্ডার এর কিছু লক্ষণ হলো-
- বিনা কারণে রক্তপাত
- মাসিকের সময় খুব বেশি রক্তক্ষরণ
- হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পরা
- ছোট কাটা বা ক্ষত স্থান হতে খুব বেশি রক্তক্ষরণ
- অস্থি সন্ধিতে রক্তক্ষরণ
এসব দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হবে। সেই সাথে সতর্কতা অবলম্বন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে ও এন্টিকোয়াগুলেন্ট জাতীয় ওষুধ ও ইঞ্জেকশন কোনভাবেই নেয়া যাবেনা।
মুনাওয়ার মাহতাব/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্য সুত্রঃ ল্যাবটেস্ট অনলাইন ,হেলথ লাইন , মার্ক ম্যানুয়ালস
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1
+1