মস্তিষ্কের কার্যক্রম শনাক্তকরার নতুন প্রযুক্তি, ব্রেনওয়েভ নিয়ন্ত্রিত ডিভাইসগুলোর অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে! ক্রিক, স্ট্যানফোর্ড এবং ইউসিএল এর গবেষকরা মস্তিষ্কের কার্যক্রম সঠিকভাবে রেকর্ড করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন। এই পদ্ধতিটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন কিছু যন্ত্রের আবির্ভাব ঘটাতে পারে যা পঙ্গু, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, স্নায়বিক রোগ যেমনঃ মোটর নিউরন ডিজিজ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করবে।
সায়েন্স এডভান্সে প্রকাশিত এক ইদুর নিয়ে গবেষণায় দেখা যায় যে, একসাথে মস্তিষ্কের উপরিভাগ এবং গভীর অংশ সহ বিভিন্ন অঞ্চলের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য একটি সঠিক এবং পরিমাপযোগ্য পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছিল। নতুন ডিভাইসটি লেটেস্ট ইলেকট্রনিক্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিক ব্যবহার করে সিলিকন প্রযুক্তিকে সুপার-স্লিম মাইক্রোওয়্যারগুলোর সাথে একত্রিত করে, যা মানুষের চুলের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি পাতলা।
তারগুলো এত পাতলা যে তা মস্তিষ্কের গভীরে স্থাপিত হতে পারবে কোনো ক্ষতি ছাড়াই। মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ সঠিকভাবে নিরীক্ষণের ক্ষমতার পাশাপাশি ডিভাইসটি মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে বৈদ্যুতিক সংকেত পৌছানোর কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
যখন ডিভাইসটি মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত থাকে তখন সক্রিয় নিউরনগুলো থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত নিকটবর্তী মাইক্রোওয়্যারগুলো দিয়ে সিলিকন চিপে যায় এবং সেখানে মস্তিষ্কের কোন অঞ্চলগুলো সক্রিয় রয়েছে তা প্রসেস এবং বিশ্লেষণ করা হয়।
ক্রিকের Neurophysiology of Behaviour Laboratory (স্নায়ু শরীরতত্ত্ব ও আচরণ গবেষণাগার) এর গ্রুপ লিডার এবং ইউসিএলের নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক আন্দ্রেস শেফার এর ভাষ্যমতে, “এই প্রযুক্তিটি নিউরোসায়েন্স গবেষণার বাহিরেও অনেক উদ্দীপনাসৃষ্টিকারী ভবিষ্যতের উন্নয়নের ভিত্তি সরবরাহ করবে। এটি এমন একটি প্রযুক্তির দিকে নিয়ে যাবে যেটি মস্তিষ্ক থেকে মেশিনে সিগন্যাল পাঠাবে।
উদাহরণস্বরূপ, পঙ্গু ব্যক্তি যার হাত নেই তার তার কৃত্রিম হাতকে নাড়াচাড়া বা উঠানোর জন্য কৃত্রিম অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও যখন নিউরন গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে অথবা সংযোগ প্রদান করতে পারবে না তখন এটি বৈদ্যুতিক সিগন্যাল তৈরি করতে ব্যবহার করা যাবে। যেমনঃ ‘মোটর নিউরন ডিজিজ’ যে রোগে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আক্রান্ত ছিলেন।”
এই ডিভাইসটি যখন মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে তখন সক্রিয় নিউরনগুলো থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত নিকটবর্তী মাইক্রোওয়্যারগুলো দিয়ে সিলিকন চিপ এ যাবে, যেখানে মস্তিষ্কের কোন অঞ্চলগুলো সক্রিয় রয়েছে তার সাপেক্ষে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশ্লেষণ করা হবে।
গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, ডিভাইসটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যার ফলে এটি একটি প্রাণীর আকারের উপর নির্ভর করে সহজেই কাজ করতে পারে, যাতে একটি ইঁদুর এর জন্য কয়েক শত তার থেকে শুরু করে বৃহত্তর স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্য ১০০,০০০ তারের ব্যবস্থা রয়েছে। এটি এই ডিভাইসটির মূল বৈশিষ্ট্য যা ভবিষ্যতে মানুষের উপর কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
ক্রিকের Neurophysiology of behaviour Laboratory এর সহযোগী লেখক ও পোস্টডক এবং ইউসিএলের সিনিয়র গবেষক মিহলি কল্লো এর ভাষ্যমতে, “মস্তিষ্কের কার্যক্রম রেকর্ড করার প্রযুক্তিতে অনেকগুলো বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হচ্ছে, মস্তিষ্কের গভীর অঞ্চলে ইলেকট্রোড নামক তারগুলো কিভাবে কোনো টিস্যুর ক্ষতি বা রক্তপাত ছাড়া স্থাপন করে এর কাজ পর্যবেক্ষণ করা যায়। আমাদের প্রযুক্তিতে এক্ষেত্রে যথেষ্ট পাতলা ইলেকট্রোড ব্যবহার করা হবে যা এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি দিবে।
আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, অনেকগুলো নিউরনের ক্রিয়াকলাপ রেকর্ড করা যেগুলো ত্রিমাত্রিক স্থানে স্তরে স্তরে জটিল আকৃতিতে সাজানো আছে। এর সমাধানের আমরা ব্যাবস্থা করেছি যেন তারগুলোকে ত্রিমাত্রিক আকারে সাজানো যায়।”
গবেষণায় বর্ণিত প্রযুক্তিটি পুরোপুরি মস্তিষ্কের কম্পিউটার ইন্টারফেস সিস্টেমের ভিত্তি যা এই গবেষণাপত্রের এর অন্যতম লেখক ম্যাথিউ এঞ্জেল প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা প্যারাড্রমিক্স (Paradromics) থেকে প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ভিত্তিক এই সংস্থাটি একটি মেডিকেল ডিভাইস প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য কাজ করছে যা পক্ষাঘাত, সংবেদনশীল প্রতিবন্ধকতা এবং ড্রাগ প্রতিরোধী নিউরোসাইকিয়াট্রিক রোগ সহ গুরুতর রোগে আক্রান্ত মানুষের জীবন উন্নত করবে।