ব্যথা কখনোই কাঙ্খিত নয়। তবে বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ব্যথার মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি আমদের দেহেপ্রাপ্ত আঘাত কতটা ভয়ংকর।
মানবদেহের সর্ববৃহৎ অঙ্গ ত্বক যা সাধারণত যেকোনো ব্যথা বা আঘাতে প্রথম প্রতিক্রিয়া দেয়। যখনই দেহে কোনো আঘাত আসে তখনই ত্বক প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে আঘাতকে রোধ করার জন্য মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। এ আঘাত হতে পারে তাপ, চাপ বা অন্য কিছু। যেমন যখন আমরা গরম কিছু স্পর্শ করি, তখন আমাদের ত্বকের ব্যথা রিসেপ্টরগুলো স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করে। এতে আক্রান্ত অঙ্গ দ্রুত তাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন এ অবস্থিত RMIT University ‘র গবেষকগণ এবার এমন একটি কৃত্রিম ত্বক তৈরি করেছেন যা মানবত্বকের এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে এবং ব্যথার উত্তেজনায় প্রতিক্রিয়া জানাবে।
RMIT University ‘র অধ্যাপক ও এই প্রকল্পের প্রধান মধু ভাস্করান বলেন, “কৃত্রিম ত্বকটি তৈরি হয়েছে সিলিকন রাবার দ্বারা। এর কর্মদক্ষতা প্রকৃত মানবত্বকের প্রায় কাছাকাছি।” তিনি আরও বলেন, “এই পদ্ধতি কৃত্রিম রসায়ন ও রোবোটিক্সে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে পারে।
এই কৃত্রিম ত্বকের বাহ্যিক স্তরে সেন্সর যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে বাহ্যিক স্তরটি স্ট্যান্ড স্যান্ডউইচ ইলেক্ট্রনিক সার্কিটের মতো কাজ করে যা উদ্দীপনায় সাড়া দিবে। আমাদের দেহত্বকের কাজ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠানো। একইভাবে কৃত্রিম ত্বকের সেন্সর ব্যথার উদ্দীপনা সনাক্ত করবে ও মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠাবে।
ভাস্করান বলেন, “এই প্রকল্পের মূল লক্ষণীয় একটি বিষয় ছিলো আঘাতের সীমানা”। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমাদের ত্বক প্রতিনিয়তই উদ্দীপনা গ্রহণ করে।কিন্তু মস্তিষ্কে তখনই প্রতিক্রিয়া পাঠায় যখন উদ্দীপনার মাত্রা একটি সীমা ছাড়িয়ে যায়। প্রতিক্রিয়া পাঠানোর ক্ষেত্রে ত্বক ও মস্তিষ্ক উভয়ই একটি নির্দিষ্ট সীমা বিবেচনা করে।”
কৃত্রিম ত্বক তৈরির সময়ও বিজ্ঞানীরা এই বিষয় মাথায় রেখেছেন যেন তা একটি ন্যূনতম মাত্রা বুঝতে পারে। অর্থাৎ পিনের মৃদু স্পর্শ ও ছুরিকাঘাতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার কিবার্ড যিনি এই কাজের সাথে যুক্ত নন তিনিও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ১৯৯৮ সালে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থাপিত কৃত্রিম অঙ্গের সংকেতগুলো খুবই দুর্বল হয়।” বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি বায়োনিক হাত ‘আই-লিম্ব‘। এতেও উন্নত গতিশীলতা সরবরাহ করে স্বাভাবিক হাতের মতো কাজ করলেও, স্পর্শের মাধ্যমে বিপদ শনাক্তের উপায় ছিল না।
এ ব্যাপারে ভাস্করান বলেন, “আমরা কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছি যেন কৃত্রিম অঙ্গগুলো মস্তিষ্ক থেকে সংকেত প্রয়োজনীয় অঙ্গে নিয়ে যেতে পারে। যেহেতু কৃত্রিম অঙ্গগুলোর সত্যিকারের ত্বক নেই। তাই এগুলো বাহ্যিক ঝুঁকি বুঝতে পারে না। এজন্যই অনুভূতি সম্পন্ন ত্বক খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেন তা কৃত্রিম অঙ্গে অনুভূতি বহন করতে পারে।
কৃত্রিম ত্বকের বিষয়টি সাফল্য পেলে বায়োনিক গবেষণায় একটি যুগান্তকারী সাফল্য অর্জিত হবে।
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সি এন এন
+1
2
+1
+1
+1
4
+1
+1
+1