ফোবিয়া শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সবাই কম-বেশি পরিচিত। একটু বইয়ের ভাষায় বললে এর অর্থ দাঁড়ায়, “ফোবিয়া হচ্ছে কোনও বিশেষ বস্তু কিংবা কোনও বিশেষ ঘটনায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় আতঙ্কিত হওয়া, অস্বস্তিবোধ করা বা অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া অথবা সেই ব্যপারটাকে অহেতুক এড়িয়ে চলার প্রবণতা।” মনে করেন আপনি পড়ার টেবিলে কিংবা লাইব্রেরীতে বসে আছেন। আপনার চারপাশে বইয়ের সমারোহ। কিন্তু আপনার কোনো বই পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। উপরন্তু আপনার বই এর প্রতি এক ধরনের ঘৃণা কিংবা ভয় কাজ কাজ করছে, এটাই বিবিলিওফোবিয়া ।
বিবিলিওফোবিয়া বইয়ের প্রতি একটি অস্বাভাবিক ফোবিয়া। আসলে এটি একটি যুক্তিহীন ভয়। আপনি যদি বিবিলিওফোবিয়া অনুভব করেন, তাহলে পড়ার সময় আপনার অসুবিধা হতে পারে। আপনি পড়ার সময় কিংবা লাইব্রেরীতে অসংখ্য বই দেখেও ভয় পেতে পারেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন এটি সাধারণত ছোট বয়সে শুরু হয়। এটি কোনো আঘাতজনিত অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: স্কুলে বাচ্চাদের পড়ার সময় কিছু অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। এমন কোনও শিশুর কথা চিন্তা করুন, যার কিনা পড়তে সমস্যা হয় কিন্তু তাকে জোড় করে কোনো পড়া পড়তে বলা হয়।
তাই সবার সামনে শিশুটি পড়া শুরু করে, তবে সে খুব ধীরে ধীরে পড়া শুরু করে। শিশুটি ঘাবড়ে যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে সহপাঠীদের হাসিতে তার খারাপ অনুভূত হয়। সে এই অভিজ্ঞতাটি ভুলে যায় না। অনেক বছর পরেও পড়ার সময় তার এই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা মনে পড়ে এবং সে প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ করে। একারণে সে যে কোনও মূল্যে বইকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।
অনেক সময় বিবিলিওফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তিরা বিভিন্ন অপ্রিতিকর ঘটনাও ঘটিয়ে থাকেন। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বে আলেকজান্দ্রিয়া, ১১৯৩ সালে নালন্দা, ১৯৮১ সালে জাফনার লাইব্রেরি পুড়িয়ে দেয় বিবলিওফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তিরা। তারা এমন কিছু লোক যারা প্রায়ই বই না পড়ে লেখকদের সেন্সর বা বিচার করার চেষ্টা করে। আমাদের মধ্যেও ছদ্মবেশী বিবিলিওফাইল আছে, যারা ভান করে যে তারা বই পড়তে ভালোবাসে। তারা কথোপকথনে লেখকদের নাম বা লিখা ব্যাবহার করে, এমনকি তারা বই কিনে এবং বন্ধুদের কাছ থেকে বই ধার করে, কিন্তু কখনও ফেরত দেয় না!
এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তিদের কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এরা সাধারণত কল্পনায় চরম উদ্বেগ এবং ভয় পেয়ে থাকে। এছাড়াও দ্রুত হার্টবিট উঠানামা, কম্পিত হওয়া, আচরণে এড়িয়ে চলা, অস্বস্তির চিন্তাভাবনা করা, হাইপারভেন্টিলেশন, হালকা মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, বুকে ব্যথা বা শক্ত হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। যেহেতু বিবিলিওফোবিয়া কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে এবং সেইসাথে ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই এই ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে একজন মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসক আপনাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন। প্রথমত আপনাকে আপনার অস্বস্তি সৃষ্টি করে এমন চিন্তাভাবনাগুলো বা আচরণগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে। আপনাকে বই সম্পর্কে চিন্তা করার নতুন উপায় শেখার চেষ্টা করতে হবে। আপনার সর্বোত্তম পদক্ষেপ হল বইয়ের প্রতি আপনার ভয়কে কমিয়ে আনা, উদ্বেগ কমাতে বইয়ের সাথে নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। আপনার এই চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে আপনার ফোবিয়াকে আরও ভালভাবে কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
তো পাঠক কি মনে হয়? বই কে কি ভয় পান, আপনি বিবিলিওফোবিয়া তে আক্রান্ত নন তো?
মেহেদি হাসান মামুন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Daily News, Very Well Mind, Health Grades