বিশ্বজুড়ে নারীদের সমতা, শিক্ষা, ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভরতার বিষয় যখন আলোচনার শীর্ষে সেখানে কতটুকু নারীর অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে ইহা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান যে কতটা ব্যাপক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।(নারী বিজ্ঞানী) তবে অনুসন্ধান বা গবেষণামূলক সে সকল কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীদের সমঅবস্থান কি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছ? আর কেনই বা STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত”)-লেভেলে নারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম?
ইয়েলের গবেষকরা একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন যা প্রমাণ করে যে পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং জীববিজ্ঞানীরা একজন তরুণ পুরুষ বিজ্ঞানীকে একই যোগ্যতার একজন মহিলার চেয়ে অধিক অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। সেখানে দেখা যায়, ছয়টি প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকরা একজন পুরুষকে চাকরি দেওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ইচ্ছুক ছিলেন। যদিও তারা মহিলাকে নিয়োগ করে, তারা তার বেতন নির্ধারণ করে, গড়ে, পুরুষের তুলনায় প্রায় $৪,০০০ কম। আশ্চর্যজনকভাবে, সেখানে অবস্থানরত মহিলা বিজ্ঞানীরাও তাদের পুরুষ সহযোগীদের মতোই পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন।
নতুন গবেষণাটি বিজ্ঞানে নারীদের প্রতি অবিরত পক্ষপাতিত্বের কঠোর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এই দেশে পদার্থবিদ্যার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ পিএইচডি নারীদের দেওয়া হয়, এবং সেই নারীদের মধ্যে মাত্র অর্ধেক আমেরিকান; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী।কালো এবং হিস্পানিক বিজ্ঞানীদের সংখ্যা আরও কম; একটি সাধারণ বছরে, ১৩ জন আফ্রিকান-আমেরিকান এবং ২০ জন ল্যাটিনো উভয় লিঙ্গের পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি লাভ করে। BBC ফোকাস-এর এক প্রতিবেদনে কিছু তরুণ মহিলা বিজ্ঞানীদের STEM বিষয়ক ক্যারিয়ার বেছে নিতে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় তা জিজ্ঞাসা করা হলে তারা তাদের অভিমত প্রকাশ করেন।
মাধ্যমিক স্কুলের ৭৪ শতাংশ মেয়েদের বিজ্ঞান বিষয়ক সাবজেক্টগুলোর প্রতি আগ্রহ থাকলেও উচ্চ শিক্ষায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে আত্মবিশ্বাসের অভাবে এই আগ্রহ অনেকাংশে কমে যায়। শেখার পরিবেশ এবং সামাজিক বিশ্বাস ব্যবস্থা STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত) বিষয়গুলিতে মেয়েদের আগ্রহ এবং অর্জনকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে৷ সমাজের এক ধরনের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে, বিজ্ঞান বিষয়গুলোতে মেয়েদের যথাযথ পারদর্শিতা সম্ভব নয়। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েদের আত্মবিশ্বাসে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সমাজের ও পরিবারের মানুষের উৎসাহের অভাব ভবিষ্যতে মেয়েদের ক্যারিয়ার পছন্দের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুনঃ অ্যাপোলো ১১ চন্দ্রাভিযান– অসম্ভবকেও সম্ভব করেছিলেন এই ১৫ জন নারী
কর্মক্ষেত্রে একজন তরুণ পুরুষ বিজ্ঞানীকে একই যোগ্যতার একজন মহিলার চেয়ে অধিক অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে। যদি মহিলাদের নিয়োগ করা হয় তবে তাদের বেতন পুরুষদের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের চাকরিতে নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় কম দক্ষ হিসেবে দেখা ও তাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করার কারণেও নারীরা এ ধরনের কর্মক্ষেত্রেকে উপেক্ষা করে চলে।
রিদিতা ইফরাত/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ https://www.sciencefocus.com/science/why-arent-there-more-women-in-science/