শুরুতে ছিল একটা ভীষণ ঘন, ছোট বল। এরপর হল বিস্ফোরণ, পাওয়া গেল পরমাণু, অণু, তারা, ছায়াপথ- যা আজ আমরা দেখতে পাই।
কিন্তু নতুন এক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একেবারে প্রথম দিককার অবস্থার ঘটনা উন্মোচিত করেছে। তা বলছে, বিস্ফোরণটি হল ‘বিগ বাউন্স সাইকেল’ এরই সর্বশেষ পুনরাবৃত্তি।
বিগ ব্যাং থিওরি অনুযায়ী, অনেক আগে বিশ্বব্রহ্মান্ড ছিল ছোট, ঘন ও উত্তপ্ত একটি বস্তু। ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে মাত্র এক ডজন মিনিটের ব্যবধানে সকল মৌল গঠন হয়। বিস্ময়করভাবে এই কাল্পনিক গল্পটিই প্রথমদিকের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণায় সত্য বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু পাজেলের একটা অংশ তখনো নিখোঁজ ছিল, তা হল মহাবিশ্বের একদম প্রথম দিকের মুহূর্ত। এবং এই অংশটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থবিজ্ঞানের যতটুকু অংশ ব্যবহার করে মহাবিশ্বকে বোঝা যায়,(জেনারেল রিলেটিভিটি, হাই এনার্জি পার্টিকেল ফিজিক্স) তা দিয়ে একদম প্রথমে মহাবিশ্ব কি অবস্থায় ছিল তা জানা যায়না। আমাদের অজানা বিষয়টি হল ‘সিঙ্গুলারিটি’ বা অসীম ঘনত্ব। সিঙ্গুলারিটি বলে, এক সময় মহাবিশ্ব ছোট, অসীম একটা বিন্দুতে ঠাসা ছিল। এই ব্যাপারটি কিছুটা অদ্ভুত, এটা বোঝার জন্য নতুন পদার্থবিজ্ঞান প্রয়োজন, পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমান তথ্য এর জন্য যথেষ্ট নয়।
এর জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে স্ট্রিং থিওরি, যা মহাকর্ষ ও অন্যান্য বলকে একসাথে ব্যাখা করতে সম্ভব হবে।
স্ট্রিং থিওরির একটি ধারণা হল ‘ekpyrotic’ মহাবিশ্ব, যা গ্রিক শব্দ ‘conflagration’ বা আগুন থেকে এসেছে।এই দৃশ্যপট অনুযায়ী “বিগ ব্যাং” মহাবিশ্বের শুরু নয়, বরং অনেক ব্যাপক একটি প্রক্রিয়ার একটা অংশ মাত্র। ‘ekpyrotic’ ধারণা যে তত্ত্বের দিকে আমাদের নিয়ে যায় তা হল সাইক্লিক কসমোলজি। মহাবিশ্বের পুনরাবৃত্তিমূলক এ ঘটনার ধারণা বহু পুরনো, কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্ব এ ধারণাকে দৃঢ় গাণিতিক ভিত্তি প্রদান করে।
কিন্তু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা গেছে, সাইক্লিক মহাবিশ্বের ধারণাটি সঠিক নয়। কিন্তু ‘ekpyrotic’ ধারণাটির সম্ভাবনা এখনো বিদ্যমান।জানুয়ারি তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট ব্র্যান্ডেনবার্গার ও জিউই ওয়াং বলেছেন, বাউন্সের মুহূর্তে যখন আমাদের মহাবিশ্ব ছোট বিন্দুতে ঘনীভূত হয় ও পুনরায় বিগ ব্যাং অবস্থায় ফেরত যায়, তখন পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত ফলাফল পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব। সারকথা, জটিল এই পদার্থবিজ্ঞান (যা এখনো আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি) মহাবিশ্বে আমাদের কাল ও সময়ের সংশোধিত ধারণা দিতে পারে। তবে এর জন্য নতুন জেনারেশনের কসমোলজি এক্সপেরিমেন্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
নুসরাত জাহান ফাইজা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ লাইভ সাইন্স