আপনারা সকলে হয়তো এখনও মনে করতে পারেন ২০২০ সালের সেই ভয়াবহ মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের কথা। সেই করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, ঘরবন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে মানুষদের। সেই করোনা ভাইরাস এর মত লক্ষ লক্ষ ভাইরাস রয়েছে পৃথিবীতে। এসব ভাইরাস মানুষের মাধ্যমে, পশুপাখির মাধ্যমে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মাঝে একটি হলো বার্ড ফ্লু ভাইরাস।
বার্ড ফ্লু হলো এমন একটি ভাইরাস যা প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্ট এবং এই ভাইরাস সাধারণত বন্য পাখিদের মাঝে দেখা যায়, এটি গৃহপালিত পাখি এবং মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি হলো এক ধরনের টাইপ এ (Type A) ভাইরাস। আর এই ভাইরাসটি H5N1 নামে পরিচিত।
আমেরিকাতে সাধারণত বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি পাখিদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। পাখিদের মাধ্যমে এখন গরুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। আর ওই আক্রান্ত গরুগুলো হতে পাওয়া দুগ্ধজাত পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত বাংলাদেশ সহ অনেক দেশ আমেরিকা হতে দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করে থাকে। এর ফলে ঐ দুগ্ধজাত পণ্য হতে বাংলাদেশ সহ অনেক দেশ এর মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ২০শে এপ্রিল একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আর তাতে বলা হয়েছে যে তারা বাজার হতে দুগ্ধজাত পণ্যের প্রায় ২০% নমুনা সংগ্রহ করে এবং তা পরীক্ষা করে সেখানে অল্প পরিমাণে H5N1 ভাইরাস পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত আমেরিকার ৯টি রাজ্যে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এফডিএ বলছে যে যাচ্ছে, পরীক্ষা করা প্রতি পাঁচটি নমুনার মধ্যে একটি নমুনা ইতিবাচক। বর্তমানে বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি আমেরিকার খুব কম সংখ্যক দুগ্ধ ফার্মে গরুদের আক্রান্ত করেছে।
স্বস্তির বিষয় হচ্ছে যে বিজ্ঞানীরা এটিকে মানব দেহের উপর হুমকির বিষয় হিসেবে দেখছে না।
বৃহস্পতিবার এর পরের দিন এফডিএ সুসংবাদ সহ একটি আপডেট পোস্ট করে বলে যে আক্রান্ত নমুনার মাঝে পাওয়া ভাইরাস গুলো সক্রিয় নয় এবং মৃত। এটি হয়েছে দুধের পাস্তুরাইজেশন এর কারণে।
সাধারণত আমেরিকায় দোকান দোকানে যে সকল দুধ পাওয়া যায় তা পাস্তুরাইজেশন এর মাধ্যমে সংরক্ষিত।
পাস্তুরাইজেশন বলতে বোঝায় উচ্চ তাপমাত্রায় দুধ সংরক্ষণ করাকে। ১৮৬০ সালে ফ্রান্সের পদার্থবিজ্ঞানী এটি আবিষ্কার করে দুধ থেকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া শোষণ করার জন্য। সাধারণত এই পাস্তুরাইজেশন দুধের মধ্যে থাকা ভাইরাসকে মেরে ফেলে। মুরগির ডিমেও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে সেগুলো কম তাপমাত্রায় সংরক্ষিত করা হলেও ডিমে সক্রিয় বার্ড ফ্লু পাওয়া যায়নি।
কিছু বিজ্ঞানী এবং সংক্রামক বিশেষজ্ঞরা আমেরিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাইরাসটির প্রতি অনীহা এবং এই ভাইরাসটি সম্পর্কে বিশদ তথ্য না জানার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ভাইরোলজিস্ট এঞ্জেলা রাসমুসেন মঙ্গলবার তার এক্স-ট্রেড এ বলেন যে বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি তাদের ধারণা থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এফডিএ তাদের শুক্রবারের আপডেট এ বলেছে তারা নিয়মিত দুধের নমুনা এর পরীক্ষা চালিয়ে যাবে এবং সম্ভব হলে পরীক্ষার ফলাফল সকলকে জানানো হবে।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, যে সকল দুধ পাস্তুরাইজেশন করা নেই বা কাঁচা দুধ তাদের কী হবে?
এফডিএ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে কাঁচা দুধে ভাইরাসটি সক্রিয় অবস্থায় থাকতে পারে। তাই তারা কাঁচা দুধ খেতে সকলকে নিষেধ করছে।
আবার কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এই ভাইরাসটি খাওয়া বা পান করার মাধ্যমে ছড়ায় না।
মেগ শেফার একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন যে মানুষের উচিত কাঁচা দুধ না খাওয়া এবং এগুলো দোকানে বাইরে নিয়ে না যাওয়া।
বার্ড ফ্লু ভাইরাসটি বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে তবে তা খুব কম। কারণ বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ আমেরিকা হতে পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত দুধ আমদানি করে থাকে। যার ফলে ওই সকল দুধগুলোতে ভাইরাসটি সক্রিয় অবস্থায় থাকে না। আর এই ভাইরাসটি ছোঁয়াচে নয়। যার ফলে বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসলে অন্য কেউ আক্রান্ত হয় না।
এরকম পৃথিবীতে আরো লক্ষ লক্ষ ভাইরাস রয়েছে যা করোনা ভাইরাস হতেও অধিক শক্তিশালী। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সাইবেরিয়ার বরফের নিচে একটি ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছে যা করোনা থেকেও কয়েকশো গুন শক্তিশালী।
এছাড়াও আরো অনেক শক্তিশালী ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। এসব ভাইরাসের কারণে এক সময় পৃথিবীতে প্রাণীদের বিলুপ্তি ঘটবে। তাই বিজ্ঞানীদের এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে।
কাব্য বিশ্বাস / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : সায়েন্টিফিক আমেরিকা, সিনেট