বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আভাস মতে, করোনা ভাইরাস হয়তো এইডসের মত কোনো স্থায়ী ভাইরাস হতে চলেছে। হয়তো আমাদের একে মেনে নিয়েই নতুনভাবে জীবনযাপনের পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। কিন্তু তা বলে বিজ্ঞানীরা থেমে নেই। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ এর ডিরেক্টর জানিয়েছিলেন, কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে কোন পথই বাকি রাখা হবে না। আর এতশত ঘটনা প্রবাহের ভেতর অন্যতম আশা জাগানীয়া তথ্য হল, করোনা ভাইরাসের একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে যা এখন মানুষ এবং বানরের উপর পরীক্ষা চলছে।
মন্টানায় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ (NIH) এর রিসার্চাররা ভ্যাকসিনটি ছয়টা রেসাস বানরের উপর পরীক্ষা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, যেসব বানরের উপর এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই এ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে। পরীক্ষার সময় বানরগুলোকে মানব দেহে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনের হাফ ডোজ করে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ইঁদুরের দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছে, সেখানেও ফলাফল আশাব্যঞ্জক। দেখা গেছে, প্রাণি গুলোকে টিকা দেওয়ার ১৪ দিনের মাথায় তারা পূর্ণ এ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং ২৮ দিনের ভেতর সবগুলো প্রাণিতে এ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে এ্যান্টিবডি তৈরি পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না। এবিষয়ে বিজ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “কেন এ্যান্টিবডি তৈরি করাটা বিজ্ঞানীদের সন্তুষ্ট করছে না?” “আমরা সবাই জানি এটা আমাদের ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। কিন্তু শরীরের এ্যান্টিবডি প্রচুর আছে, কিন্তু কাজ করছে না, সেটা শুধু অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।”
তবে বিজ্ঞানীরা অন্য কারণে আশাবাদী। এ্যান্টিবডি কাজ করছে কিনা সে বিষয়ে তারা ছোট একটি পরীক্ষা করেছিলেন। তারা ভ্যাকসিন দেওয়া বানরগুলোকে করোনা ভাইরাসের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে নিয়ে আসেন। যেসব বানরগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি সেগুলোতে খুব দ্রুত নিউমোনিয়া এর লক্ষণ দেখা যায় যা কোভিড-১৯ এর লক্ষণ। কিন্তু বাকি ভ্যাকসিন দেওয়া বানরগুলোর ভেতর কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। উপরন্তু, বানরগুলো এ্যান্টিবডি ডেভেলপ করে যার ফলে তাদের ফুসফুসে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব এবং নিউমোনিয়ার সামান্যতম লক্ষণও দেখা যায়নি।
গবেষণায় ব্যবহৃত ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছিল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে। ভ্যাকসিনটি তৈরি হয়েছে সাধারণ সর্দিকাশির ভাইরাসকে সামান্য পরিবর্তন করে, যাতে এটি ইনফেকশনটি ছড়াতে না পারে, আবার এই ভ্যাকসিনে আছে করোনা ভাইরাসের জেনেটিক বস্তু, যা একধরণের ইমিউন এ্যাকশন ট্রিগার করে, যা ভবিষ্যত কোন সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করবে। প্রাণি গুলোর ভেতর ব্রংকোএলভিওলার ল্যাভেজ ফ্লুইড এবং শ্বাসনালির ভেতর ভাইরাসের উল্ল্যেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়া লক্ষ্য করা গেছে, নাকের ভেতর ভাইরাসের বংশবিস্তারও সীমিত করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো ভাইরাস এর সংক্রমণ কার্যকর ভাবে ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
ফলাফল খুবই স্পষ্ট ভাবে একটি সুসংবাদের আভাস দিচ্ছে, যদিও ভাইরাল ইনফেকশন এবং নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর সংমিশ্রন পাওয়া গেছে, তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বাড়ানো সম্ভব হয়নি। গবেষকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও গবেষণা চলতে থাকবে। উল্লেখ্য, রেসাস বানরের জিনের সাথে মানুষের জিনের ৯৭% মিল আছে। তবে বিজ্ঞানীরা ততক্ষন পর্যন্ত খুশি নন যতক্ষন পর্যন্ত সেটা মানবদেহে পূর্নভাবে সফল হচ্ছে।
ঋভু / নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
+1
+1
+1
+1
+1