বেশিরভাগ লোকের সময়ে সময়ে মানসিক উত্থান–পতন হয়। তবে, কখনও কখনও আপনি যদি প্রচুর উত্তেজিত বা উদ্যমী বোধ করে থাকেন এবং অন্যান্য সময় আপনি নিজেকে আবিষ্কার করেন গভীর হতাশায় এবং এ অবস্থা যদি কয়েক সপ্তাহ থেকে মাসব্যাপী স্থায়ী হয় তাহলে হয়তো আপনি বাইপোলার ডিজঅর্ডার এ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। কি এই বাইপোলার ডিজঅর্ডার? চলুন জেনে নিই।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার কী?
বাইপোলার ডিজঅর্ডার মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অবস্থা। আপনার যদি বাইপোলার ডিজঅর্ডার নামক মস্তিষ্কের অবস্থা থাকে তবে আপনার অনুভূতিগুলি অস্বাভাবিক উচ্চ বা নিম্ন স্তরে পৌঁছতে পারে।অর্থাৎ, আপনি হঠাৎ অতি মাত্রায় খুশি থাকবেন এবং হঠাৎ কিছু সময়ের জন্য আপনি হতাশায় বুদ হয়ে পড়বেন।
মেডিকেল সাইন্সে ৪ ধরনের বাইপোলার ডিজঅর্ডার এর কথা উল্লেখ থাকলেও বাইপোলার-১ এবং বাইপোলার-২ নামক এই ২ ধরনের বাইপোলার ডিজঅর্ডার সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
বাইপোলার-১ এবং বাইপোলার-২:
বাইপোলার–১ এবং বাইপোলার–২ এর মধ্যে অনেকটাই সাদৃশ্য থাকলেও বেশ কিছু দিক দিয়ে এদের পৃথক ভাবে শনাক্ত করা যায়।
সমস্ত ধরণের বাইপোলার ডিজঅর্ডার কিছু এপিসোড দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। আনন্দদায়ক এপিসোডগুলো ম্যানিক এপিসোড হিসাবে পরিচিত। হতাশাদায়কগুলো ডিপ্রেশন এপিসোড হিসাবে পরিচিত।
বাইপোলার–১ এবং বাইপোলার–২ এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য প্রতিটি ধরণের দ্বারা সৃষ্ট ম্যানিক পর্বগুলির তীব্রতায়।
বাইপোলার-১ এর সাথে একজন ব্যক্তি একটি সম্পূর্ণ ম্যানিক এপিসোড উপভোগ করবেন, যখন বাইপোলার-২ যুক্ত ব্যক্তি কেবল একটি হাইপোম্যানিক এপিসোডের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন (যা একটি সম্পূর্ণ ম্যানিক পর্বের চেয়ে কম তীব্র)।
বাইপোলার–১ ডিজঅর্ডার যুক্ত ব্যক্তি একটি বড় ডিপ্রেশন এপিসোড অনুভব করতে পারে আবার নাও অনুভব করতে পারে, যেখানে বাইপোলার-২ যুক্ত কোনো ব্যক্তি নিশ্চিতভাবে একটি বড় ডিপ্রেশন এপিসোড উপভোগ করবেন।
অর্থাৎ, বাইপোলার–১ এর ক্ষেত্রে রোগী কিছু সময় গভীর আনন্দে নিমজ্জিত থাকে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে তারা অনেক ধরনের অসংলগ্ন কার্যকলাপ করে। তারা যে ঠিক কি কারনে খুশি তা বুঝে ওঠা সাধারন মানুষের কাছে দুষ্কর। মাঝে মাঝে তারা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে বসে।বাইপোলার–১ এর ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন পর্যায়টি যে আসবে তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
বাইপোলার–২ এর ক্ষেত্রে আমরা প্রায় এক বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করি। বাইপোলার–২ আক্রান্ত ব্যক্তির ম্যানিক পর্যায় (আনন্দ পর্যায়) বাইপোলার–১ এর মতো ততটা তীব্র নয়। তবে বাইপোলার–২ এর ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন পর্যায় এর তীব্রতা প্রবল থাকে। তারা বেশি হতাশায় ভুগেন। তাদের খাবার এর রুচি একেবারে কমে যায়। ঘুম হয় না। সকল কাজে মনযোগের অভাব লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সাধারন দৃষ্টিতে বাইপোলার–২ কে সাধারণ ডিপ্রেশন মনে হতে পারে। তবে এটি সাধারন ডিপ্রেশন হতে বহুগুণে বেশি বিপদজনক।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার কেন হয়?
মেডিকেল সাইন্স এখনো এর কারন খুঁজে পেতে সক্ষম হয় নি। তবে ধারনা করা হয় মস্তিষ্কে উৎপন্ন কিছু জটিল রাসায়নিক এর জন্য দায়ী হতে পারে। তবে, পরিবারের কারো এ সমস্যা থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যরা নিজেদের মধ্যে এই সিন্ড্রোমগুলো নিয়ে নিতে পারে।
গবেষকরা একমত যে, তীব্র হতাশা, মাদকাসক্তি, তীব্র অবসাদ কারো মধ্যে এই বাইপোলার ডিজঅর্ডারের জন্ম দিতে পারে।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার এর চিকিৎসা কী?
বাইপোলার ডিজঅর্ডার কখনোই সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব নয়। তবে উপযুক্ত মেডিকেশন এবং সকলের নিবিড় সহায়তার মাধ্যমে এই সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
সবচেয়ে ভালো হয় কোনো মনোবিদ এর পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপীর ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তীব্র ম্যানিক এপিসোড বন্ধ করার জন্য MOOD STABILIZER জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনঃ লিথিয়াম। তবে এর কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে গিঁটে ব্যাথা, অজীর্ণতা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা অন্যতম।
এটি একটি মানসিক ব্যাধি। কোনোভাবেই এটাকে ছোটভাবে নেওয়া যাবে না । এর প্রকাশ নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা এবং রোগীর প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া। সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং বিশেষ যত্নই পারে বাইপোলার ডিজঅর্ডারকে দমিয়ে রাখতে।
মেহেদি হাসান শাওন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন