কী হবে যদি বলা হয় এমন একটি সুর আছে যেটি শোনার পর আপনার পড়াশোনা এবং কাজের প্রতি মনোযোগ আগের তুলনায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন। শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এমনই একটি সুরের সন্ধান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা যেটিকে বলা হয় বাইনরাল বিটস। এটি এমন একটি সুর যা মস্তিষ্ককে শান্ত করতে ব্যবহার করা হয়।
বাইনরাল বিটসগুলো মস্তিষ্কের তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন করে বিভিন্ন মানসিক অবস্থা অনুকরণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আলফা তরঙ্গগুলো প্রচার করার জন্য ডিজাইন করা বাইনরাল বিটগুলো শিথিলকরণ বা মনোযোগ কেন্দ্রীকরণে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া এটি মস্তিষ্কে নিউরনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বাইনরাল বিটসগুলো সিন্যাপসের বৃদ্ধি করতে পারে, যার ফলে নিউরনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে বাইনরাল বিটগুলো মস্তিষ্কের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য নিউরনগুলোকে রক্ষা এবং নতুন নিউরনগুলোর বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে। বাইনরাল বিটস বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্নভাবে বানানো হয়েছে। এই বাইনরাল বিটস ৫ প্রকার।
১. আলফা।
২. থিটা।
৩. ডেলটা।
৪. বিটা।
৫. গামা

আলফা বিটস: আলফা বিটসগুলো শিথিলকরণ এবং মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি সাধারণত শুনতে হয় 8-12 Hz এর ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে।
থিটা বিটস: থিটা বিটগুলো ঘুম এবং স্বপ্নের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তারা সাধারণত 4-8 Hz এর ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে শুনতে হয়।
ডেলটা বিটস: ডেলটা বিটগুলো গভীর ঘুমের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সাধারণত 0.5-4 Hz এর ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে শুনতে হয়।
বিটা বিটস: বিটা বিটগুলো সজাগতা এবং মনোযোগ কেন্দ্রীকরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি 3-30 Hz এর ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে শুনতে হয়।
গামা বিটস: গামা বিটসগুলো সাধারণত পাজল গেম এবং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। অন্যান্য বিটসগুলোর তুলনায় এই বিটটি মানুষের চিন্তাশক্তিকে প্রখর করতে বেশি সাহায্য করে। এটি 30-100 Hz ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে শুনতে হয়।
এই বাইনরাল বিটস শোনার কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো মেনে এই বিটস শুনলে এটি আরো ভালোভাবে কাজ করবে। মনে রাখবেন আপনি যেই বাইনরাল বিটসটি শুনছেন সেটি উপরে উল্লেখিত ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে হতে হবে।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও প্লাটফর্ম ইউটিউবে হাজার হাজার বাইনরাল বিটস রয়েছে যেগুলোর কিছু কিছু সঠিক ফ্রিকোয়েন্সির হলেও বেশিরভাগই ভুয়া। তাই এক্ষেত্রে বাইনরাল বিটস শোনার জন্য অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করাই শ্রেয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অ্যাপ্লিকেশন হলো Brain.fm, Meditation timer, Binaural beats generator।
এই বিটসটি শোনার জন্য অবশ্যই হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করা লাগবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে ইয়ারফোন বা হেডফোনের সাউন্ড পুরোপুরি বাড়ানো না থাকে। যেহেতু বাইনরাল বিটস তুলনামূলকভাবে তীক্ষ্ণ হয় তাই উচ্চ ভলিউমে এটি শোনার কারণে কানে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাইনরাল বিটস একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা আমাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে। এটি আমাদের মনোযোগ, শিথিলতা এবং সৃজনশীলতাকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বাইনরাল বিটস কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। তাই এটি শুনলেই যে সব কাজ নিজে থেকে হয়ে যাবে এমনটি নয়। এটি শুধুমাত্র আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করবে কিন্তু বাকি কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। তাই এটি শুনলেই সব কাজ অটোমেটিক হয়ে যাবে এমন চিন্তা করা যাবে না।
মো: শাহিনুল ইসলাম রাফি / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: স্লিপফাউন্ডেশ.অর্গ, নিউজ মেডিকেল

+1
5
+1
+1
1
+1
1
+1
1
+1
+1