সন্তান জন্মদানকে বলা হয় একটি বিস্ময়কর ঘটনা। পুরো প্রসেসে শুক্রাণু ডিম্বানুর মিলিত হয়ে ভ্রূণ গঠিত হওয়া, সেখান থেকে ধীরে ধীরে দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় শিশু। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন এই সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়াটিতে সংযোজিত হয়েছে আরো অনেকগুলো নতুন নতুন বিষয়, নিঃসন্তান দম্পতি-রাও এখন নিতে পারেন মাতৃত্ব-পিতৃত্বের স্বাদ। তেমনি একটি পদ্ধতি হলো আইভিএফ (IVF), যার ফ্রোজেন ভ্রূণ থেকে গত একত্রিশ অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন Lydia ও Timothy Ridgeway।
ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টারের মতে এটাই হতে পারে সবথেকে দীর্ঘ সময় থাকা ফ্রোজেন ভ্রূন থেকে সন্তান জন্ম নেওয়ার রেকর্ড। জানামতে এর আগের রেকর্ড ধারী ছিলেন মলি গিবসন, ২০২০ সালে জন্ম হয়, যাঁর ভ্রূনাবস্থা ফ্রোজেন অবস্থায় ছিলো প্রায় সাতাশ বছর। তারও আগের রেকর্ড Emma-র নামে, যার ভ্রূনাবস্থা ফ্রোজেন অবস্থায় ছিলো চব্বিশ বছরের মতো।
আইভিএফ এর মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের পদ্ধতিতে দেখা যায় একের অধিক ভ্রূণ তৈরি হয়। এই এক্সট্রা এমব্রায়ো রিসার্চ, ডোনেশন বা রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিনে ট্রেইনিং এর জন্য অথবা যারা সন্তান নিতে চায় তাদের জন্য ক্রায়োপ্রিজার্ভেশনের মাধ্যমে রাখা হয়। অন্যান্য ডোনেশনের মতোই ভ্রূণ ডোনেশনের ক্ষেত্রে কিছু ক্রাইটেরিয়া ফলো করতেই হয়।
আইভিএফ এ তৈরি করা ভ্রূন যদি অতিরিক্ত হয় এবং তা ব্যবহার না হয় তখন সেক্ষেত্রে পাঁচটা অপশন থাকে-
- ভ্রূণ ফেলে দেওয়া
- এরপরে আবার সেইখানে থেকে বাচ্চা নেওয়া
- বিজ্ঞান গবেষণার উদ্দেশ্যে ডোনেট করা
- অন্য কোনো কাপলকে ভ্রূণ ডোনেশন দেওয়া
- Decide not to decide- যখন আসল কাপলরা কন্টাক্ট বন্ধ করে এবং স্টোরেজ ফী বন্ধ করে দেয়। এক্ষেত্রে ক্লিনিকগুলো আইভিএফ-এ সংরক্ষণ করা ভ্রূণগুলো বেশিরভাগ সময় ফেলে দেয়৷
এবারের কেস স্টাডি তে দেখা যায়- ৫০ বছর বয়স্ক স্বামী ৩৪ বছর বয়স্ক এক নারীর ডিম্বাণু ব্যবহার করে IVF এ বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করে। এই ভ্রূণ গুলো ২২শে এপ্রিল, ১৯৯২ সালে ফ্রিজ করা হয়। তিন দশকের মতো সময় ধরে একটা সূক্ষ্ম স্ট্রতে করে -১৯৬° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লিকুইড নাইট্রোজেনে রাখা হয়েছিলো তাদেরকে।
“-২০০ সেলসিয়াসে অলমোস্ট জীবের জৈবিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া অটোমেটিক ধীর হয়ে যায়, এমনকি ক্রিয়া প্রক্রিয়া হয় না বললেও চলে। এক্ষেত্রে এক সপ্তাহ, এক মাস, এক দশক, দুই দশক, তিন দশক কোনো ম্যাটার করে না”– বলেন Gordon.
এই ভ্রূনগুলো ২০০৭ সাল পর্যন্ত West Coast এর একটি ফার্টিলিটি ল্যাবে রাখা হয়েছিলো। এরপর যেই কাপল এই ভ্রূন তৈরি করেছিলেন IVF এ, তারা সেই ভ্রূনগুলো NEDC তে দান করে দেয় যাতে অন্য দম্পতিরাও সন্তান নিতে পারে। যার কারণে ভ্রূনগুলো বিশেষ ট্যাংকে করে Knoxville, Tennessee এ পৌঁছায়। (NEDC- ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টার ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই লক্ষ্যে যে কোনো দম্পতি যে নিজেরাই বাচ্চা ধারণ করতে পারে। এটি একটি প্রাইভেট মালিকানাধীন অর্গানাইজেশন। এই অর্গানাইজেশন এই পর্যন্ত ১২০০ এর বেশি ফ্রোজেন ভ্রূণ থেকে সন্তান জন্ম দানে সহায়তা করেছে।)
যেই কাপল এই জমজ সন্তানের জন্ম দিলেন, Rachel ও Philip, তাঁরা প্রথমে ডোনার ডাটাবেজ ও ভ্রূনের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা পূর্ব থেকেই অবগত হয়েছিলেন। তাদের কাছে এটি ত্রিশ বছরের ভ্রূণ নাকি এক সপ্তাহের তা কোনো প্রভাব ফেলেনি।
এই প্রক্রিয়াটির জন্য ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে পাঁচটি ভ্রূণ বের করা হয়, যার মধ্যে দুটো স্থানান্তরযোগ্য ছিলো না। এরপর বাকি তিনটে Rachel এর জরায়ু তে স্থানান্তর করা হয় ২রা মার্চে, কিন্তু সাকসেসফুল হয় দুটো। এরপর ৩৮ সপ্তাহ পর জন্ম হয় Lydia ও Timothy জমজ সন্তানের। জন্মের সময় Lydia -র ওজন ছিলো পাঁচ পাউন্ড এগারো আউন্স, আর Timothy র ছিলো ছয় পাউন্ড সাত আউন্স।
মজার বিষয় হচ্ছে, যখন এই ভ্রূণগুলোকে ফ্রোজেন করা হয়, তখন তাদের বাবা ফিলিপ ছিলেন মাত্র ৫ বছর বয়সী, এবং মা র্যাচেল-এর বয়স ছিলো মাত্র ৩ বছর! পরপর এরকম ঘটনা থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, মানুষ যদি ভ্রূন ডোনেশন দেয়, তাহলে যেই দম্পতিগুলো সন্তান আরও নিতে চাইছেন বা যাদের সন্তান দরকার তারা অনেক উপকৃত হবেন। হয়ত সামনের দিনগুলোতে এমনও হতে পারে, যে এডপশন-এ নেওয়া ভ্রূণের বয়স তার বায়োলজিক্যাল বাবা-মায়ের চেয়েও বেশি!
মিথিলা ফারজানা মেলোডি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
+1
+1
+1
1
+1
1
+1