যেহেতু চীনে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক তাই বিশ্বের অতি ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলটির ইউনিভার্সিটিগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছে। চলমান লকডাউনে প্রাপ্ত দেশপ্রেমের শিক্ষা এবং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করবে এই শর্তে তারা ইউনিভার্সিটিতে ফিরছে।
শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চলাফেরার মধ্যে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে খাবে, গোসল করবে এবং কোথায় ভ্রমণ করবে সে সকল তথ্য পাওয়া নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বেইজিং, নাঞ্জিং এবং সাংহাইয়ের কিছু ছাত্র ছাত্রী রয়টার্সকে বলেন, তাদের চলাফেরার সকল গতিবিধি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং যথাসম্ভব ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হবে।
বেইজিংয়ের রেনমিন ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র বলেন, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়া এবং কোন ধরনের কারণগুলোতে তাদের চলাফেরায় শিথিলতা বজায় থাকবে সে সম্পর্কে কিছু বলেনি।
এই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে রেনমিন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কিছু বলেনি। তবে তারা ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বলেন ছাত্রছাত্রীরা যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাদেরকে একটি দরখাস্ত করতে হবে।
তবে সরকারি হিসাব মতে ইতিমধ্যে অনেকগুলো ইউনিভার্সিটি “মহামারী নিয়ন্ত্রণ” কেন্দ্র কিনেছে এই নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলো ফেসিয়াল রিকগনিশন, রেটিনা স্ক্যান এবং দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করতে পারবে না এবং করোনার লক্ষ্মণ থাকলে সেও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা।
যদিও দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই সকল পরীক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। তবে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের স্বাস্থ্যের জন্য হলেও যেন কোনো প্রয়োজন ছাড়া ক্যাম্পাস ত্যাগ না করে। দেশটিতে ২০ মিলিয়নের অধিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই হোস্টেলে অবস্থান করছে। এটি দেশটির স্বাস্থ্যখাতকে একটি বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীদের কে নিয়ে কিছু অনলাইন ক্যাম্পেইনের আয়োজন করার কথা ভাবছে তারা। যেটি সফলভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে সহায়তা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কর্তৃপক্ষ।
বেশ কিছুদিন ধরেই চীনের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে এই কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে সে সম্পর্কে ধারণা দিয়ে অনলাইনে কিছু সংবাদ প্রদান করছে। সে ক্ষেত্রে তারা প্রযুক্তির (ফেসিয়াল রিকগনিশন, রেটিনা স্ক্যান ও অন্যান্য বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি) সহায়তা নেবে। ছাত্র-ছাত্রী এবং বহিরাগতদের গতিবিধি রেকর্ড করা হবে।
কিছু সিস্টেম একই সাথে অনেকগুলো ক্যামেরার মাধ্যমে গতিবিধি লক্ষ্য করবে এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে মুখাবয়বের তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সেই ক্যামেরার মাধ্যমে অটোমেটিক্যালি দেহের তাপমাত্রা রেকর্ড হয়ে যাবে। আবার এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে রিমাইন্ডার দেবে যার ফলে ছাত্রছাত্রীদের একই দিনে অনেকবার তাদের তথ্য প্রদান করতে হতে পারে। তাছাড়া কারা মাস্ক পরিহিত অবস্থায় নেই সেটাও ধরে ফেলতে পারবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড করে প্রতি 30 দিন পর পর তাপমাত্রার হিসেব প্রকাশ করা হবে।
“আমি হঠাৎই আমাদের হোস্টেল বিল্ডিংয়ে অসংখ্য ক্যামেরা আবিষ্কার করি। প্রত্যেক তলায় 6 টি করে ছিল”, পিকিং ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্র বলেন।
পিকিং ইউনিভার্সিটিরই আরো একজন ছাত্র বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে যেন একজন আমার ঘুমোতে যাওয়া থেকে ঘুম থেকে উঠার আগ পর্যন্ত নজরদারিতে রাখছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ধরনের একটি সিস্টেম তৈরি করতে বড় অঙ্কের একটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যেরও খবর রাখছে। যেটি ছাত্র-ছাত্রীদের একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
গোলাম কিবরিয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ রয়টার্স
+1
3
+1
1
+1
+1
4
+1
1
+1
2
+1