ধীরে ধীরে বাংলাদেশে বেড়ে চলেছে ফেসবুক সহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সংখ্যা। “ASIA INTERNET USE, POPULATION STATISTICS DATA AND FACEBOOK DATA – JUNE 30, 2020” এর হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩৮৩ জন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন যা প্রায় এশিয়ার মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৪.২ শতাংশ।
এর মাঝে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এতোদিন ধরে বাংলাদেশে ফেসবুকের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড অভিভাবকহীন রইলেও সম্প্রতি বাংলাদেশী বংশদ্ভূত সাবহানাজ রশিদ দিয়াকে বাংলাদেশে ফেসবুকের প্রথম প্রশাসক (অ্যাফেয়ার্স অফিসার) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে গতকাল (৭, সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও ফেসবুকের আঞ্চলিক সদর দপ্তর সিঙ্গাপুরের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রণালয় থেকে বৈঠকে অংশ নেন-ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফা কামাল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (ট্যাক্স পলিসি) আলমগীর হোসেন, ফার্স্ট সেক্রেটারি কাজী ফরিদ উদ্দিন এবং বিটিআরসি‘র জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক তৌসিফ শাহরিয়ার ও আমজাদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়াও ফেসবুকের পক্ষ থেকে অংশ নেন ফেসবুকের হেড অব সেফটি বিক্রম সেন, পাবলিক পলিসিবিষয়ক পরিচালক অশ্বিনী রানা, ফেসবুক মোবাইল পার্টনার বিভাগের ইরাম ইকবাল এবং নবনিযুক্ত বাংলাদেশ-বিষয়ক অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাবহানাজ রশিদ দিয়া।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফেসবুক-কে বাংলাদেশের আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা, এছাড়াও দেশ ও দেশের বাহির থেকে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সম্মান বিঘ্নিত করে এমন মিথ্যা ও গুজব বা অপপ্রচারমূলক তথ্য প্রচার ছাড়াও সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, পর্ণোগ্রাফি ও বাংলাদেশের সামাজিক- সাংস্কৃতিক মূল্যবোধবিরোধী উপাত্ত প্রচার না করতে আহ্বান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সকল প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা ফেসবুকের দায়িত্ব।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, কর ও ভ্যাট বিষয়ক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ গুগল, ইউটিউবে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসক নিয়োগের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যায় সরকার। এর ফলশ্রুতিতে সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে এই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নিজেদের প্রশাসক নিয়োগ করলো।
আধুনিকায়নের পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং-এর প্রসার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফেসবুকে দেয়া বিভিন্ন এ্যাড সহ বিভিন্ন প্রচারণা বিষয়ক কন্টেন্ট বাংলাদেশে প্রদর্শিত হলেও তা থেকে কোন রাজস্ব পেতোনা সরকার, যা নতুন করে কার্যকর ভ্যাট আইনের বিরোধী। এবং, সাবহানাজ রশিদ দিয়াকে নিয়োগের মাধ্যমে এর অনেকখানি নিরসন হবে বলে আশা করা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে সাবহানাজ রশীদ দিয়া বিখ্যাত ডাঃ এম এ রশীদ এর মেয়ে। তিনি বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক পলিসি বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।
‘বাংলাদেশ ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ‘ নামের একটি এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা তিনি, প্রায় দশ বছর প্রতিষ্ঠানটিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফেসবুকে কাজ করার পূর্বে গুগল ও টুইটারের পাবলিক পলিসি ডিপার্টমেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সাবহানাজের। ফেসবুকের বাংলাদেশ অ্যাফেয়ার্স অফিসার হিসেবে তিনি সিংগাপুর থেকে তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন। বাংলাভাষী হওয়াতে, বাংলাদেশ বিষয়ক যেকোনো বিষয়ে সে দ্রুত সাড়া দেবে এবং সমস্যার সমাধান করবে বলে জানিয়েছেন ফেসবুকের সিঙ্গাপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
এ এন এম নাঈম/ নিজস্ব প্রতিবেদক