ফুকুশিমা দুর্যোগ হলো মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১১ সালের মার্চ মাসে জাপানের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে। ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্পটি এতটাই জোরালো ছিল যে, এটি পৃথিবীকে তার অক্ষ থেকে সরিয়ে দেয়। ভূমিকম্পের ফলে সুনামির সৃষ্টি হয়, যা মূল দ্বীপ হুনশুতে আঘাত হানে। সুনামির তান্ডবে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় এবং পুরো শহর মানচিত্র থেকে মুছে যায়।
সুনামির ঢেউ ফুকুশিমার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আছড়ে পড়ে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছয়টি চুল্লীর (রিয়েক্টর) দুটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। আরও তিনটি রিয়েক্টরে কিছুক্ষণের মধ্যে গলন এবং অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। পারমাণবিক কেন্দ্রের সিস্টেমগুলো সাধারণত ভূমিকম্পের পরপরই সয়ংক্রিয়ভাবে রিয়েক্টরগুলোকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সুনামির ঢেউ মুহূর্তের মধ্যেই নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে আঘাত হানে। এতে জরুরি সময়ের জন্য রাখা জেনারেটরগুলো অকেজো হয়ে যায়। ফলে চুল্লী ঠান্ডা রাখা দুঃসহ হয়ে পড়ে। অপর্যাপ্ত কুলিং এর কারণে হাইড্রোজেন গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে। ক্ষয়িষ্ণু তাপ উৎপন্ন হতে থাকে। তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো বায়ুমন্ডল ও প্রশান্ত মহাসাগরে নিঃসৃত হওয়া শুরু করে। শুরু হয় সভ্যতার ভয়ংকরতম দুর্যোগ – ফুকুশিমা দুর্যোগ।
ঘটনার এক দশক পরেও অনেক বাসিন্দা এখনো আগের জায়গায় ফিরে আসেনি, যদিও গবেষকেরা মনে করেন স্থানটি এখন নিরাপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৩ সালে জানায়, ঐ দূর্যোগের ফলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্যান্সারের হার বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ঘটনার এক দশক পূর্তিতে জাতিসংঘ ২০২১ এর ৯ মার্চ জানায়, রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা বাসিন্দাদের মধ্যে কোন প্রতিকূল স্বাস্থ্য প্রভাব দেখা যায় নি। তবে স্থানীয় বেশ কিছু বাসিন্দাদের এখনো এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই তারা ফিরে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ স্থানটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং বসবাস উপযোগী করে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে পারমাণবিক বর্জ্য এবং তেজস্ক্রিয় পানিগুলো অপসারণ করা সত্যিই এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও প্রায় ৩০/৪০ বছর সময় লাগবে। কয়েক হাজার কর্মীর প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার এই বছরেই প্রশান্ত মহাসাগরের তেজস্কিয়তা কমাতে ফিল্টারিং পানি সমুদ্রে ছাড়তে শুরু করবে। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন এটি মহাসাগরের পানিকে পাতলা করবে এবং তা কার্যকরী প্রমাণিত হবে।
আমরাও কামনা করি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠুক ফুকুশিমা। পারমাণবিক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক বিশ্ব।
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : BBC