মেলাটোনিন:
আমাদের প্রত্যেকেরই একটি সার্কাডিয়ান রিদম¹ বা “অভ্যন্তরীণ ঘড়ি” থাকে যা 24 ঘন্টা চক্রে চলে এবং এটি আমাদের দেহের মেলাটোনিনের উৎপাদন দ্বারা প্রভাবিত হয়। অন্ধকারে মেলাটোনিন উৎপাদন করে এবং আলোর প্রতিক্রিয়াতে মেলাটোনিনের উৎপাদন হ্রাস করে। এটিকে “স্লিপ হরমোন” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কারণ এটি আমাদের শরীরকে কখন ঘুমাব এবং কখন ঘুম থেকে উঠব তা ঠিক করে থাকে।
বেশিরভাগ মানুষ মেলাটোনিনকে প্রাথমিকভাবে ঘুম আনয়নকারী হিসেবে ভাবেন। এটি অবশ্যই স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেহের নিজস্ব মেলাটোনিন উৎপাদন সার্কাডিয়ান রিদম¹ এবং ঘুম- জাগরণের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন ধরনের টিস্যু মেলাটোনিন উৎপাদন করলেও মস্তিষ্কের ছোট্ট পিনিয়াল গ্ল্যান্ডই এটির প্রধান উৎপাদক।
মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট :
জন হপকিন্সের একজন রিসার্চার বলেন- “বেশিরভাগ মানুষের দেহ নিজেরাই ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত মেলাটোনিন উৎপাদন করে। তবে প্রাকৃতিক মেলাটোনিনের উৎপাদন কম হলে তার অভাব পূরণ করতে মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। যেটি ইনসমনিয়া কিংবা Night owl হওয়া থেকে বাঁচাবে।”
ভঙ্গুর স্লিপ সাইকেল রক্ষা করতে, অনেকের নির্দিষ্ট জায়গা ব্যাতিত ভালো ঘুম হয়না আবার অনেকেরই রাতে অফিসে কাজ থাকে, এসকল ক্ষেত্রে মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট নেয়া যেতে পারে।
যদি আপনার ঘুমুতে অসুবিধা হয় তাহলে সাপ্লিমেন্ট ৩০ মিনিট আগে এবং নিয়মিত ঘুমের রুটিন করে নিতে ঘুমুতে যাবার ২ ঘন্টা আগে সাপ্লিমেন্ট নেয়া যেতে পারে। এতেও যদি আপনার ঘুম আনয়নে কাজ না করে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঝিমুনি, বমি ভাব, মাথা ধরা হতে পারে। এছাড়াও এটি এন্টিডিপ্রেসেন্ট এবং ব্লাড প্রেসারের ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এজন্য হাইপারটেনশান², হাইপোটেনশান³, ডায়াবেটিস, ডিপ্রেশন, এপিলেপসি, ব্লিডিং বা ব্লাড ক্লোটিং এর সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা উচিত।
একটানা প্রতি রাতে এটি ব্যবহারের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে শর্ট টার্ম এটি ব্যবহারে সমস্যা না থাকলেও লং টার্ম ব্যবহারে এটি আদৌও মঙ্গলজনক কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
মাত্রাতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্যে দিনকে দিন মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। “মেডস্কেপ“(ডাক্তারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়) আর্টিকেল রিসেন্টলি দাবি করে সার্কাডিয়ান রিদম ছাড়াও মেলাটোনিন কাজ করে-
* কার্ডিওভাস্কুলার হেলথে
* এন্টি এক্সিডেন্ট হিসেবে। এন্টি অক্সিডেন্ট দেহের সেলকে বুড়িয়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে।যেটিকে Apoptosis বলা হয় বায়োলজির ভাষায়। আমরা জানি ঘুমের মধ্যে দেহের পুরাতন কোষ নষ্ট হয়ে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। যেহেতু এটি ঘুমে সহায়তা করে, তার মানে ঘুমের মধ্যে দিয়ে নতুন কোষ সৃষ্টির হার বেড়ে যায়।
* হার্ট এটাক, স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপ এবং আর্থ্রোস্ক্লেরোসিস এর চিকিৎসায়।
* টাইপ -২ ডায়াবেটিসের হবার চান্স অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।
* ব্লাড সুগার রেগুলেটর হিসেবে কাজ করে।
* Alzheimer’s হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
ক্যান্সার চিকিৎসায় মেলাটোনিন :
ক্যানসারের চিকিৎসায় মেলাটোনিন Anti- cancer agent হিসেবে কাজ করে। ক্যান্সার ও টিউমার কোষ বৃদ্ধি পাওয়া থেকে প্রথম দিকেই প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমায়।
কেনইবা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মেলাটোনিন কাজ করে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা সার্কাডিয়ান রিদমের দিকটিকেই বলেছেন। মেলাটোনিন অনিয়মিত সেল ডেথ অনেকাংশে হ্রাস করে। এটিও ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়।
মেলাটোনিনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহনে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং সাপ্লিমেন্টের দিকে না ঝুঁকে দেহকে স্বাভাবিক ভাবে মেলাটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করা উচিত। এক্ষেত্রে রাতে আগে ঘুমুতে যাবার অভ্যাস গড়ে তুলা জরুরী।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
1.প্রত্যেকেরই একটি সার্কাডিয়ান রিদম বা “অভ্যন্তরীণ ঘড়ি” থাকে যা 24 ঘন্টা চক্র ক্রমিক ভাবে চলে এবং দেহের মেলাটোনিনের উৎপাদন এবং আলো-অন্ধকার দ্বারা প্রভাবিত হয়।মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের সুপ্রাকায়াজম্যাটিক নিউক্লিয়াস এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে
2.উচ্চরক্তচাপ
3.নিম্নরক্তচাপ
গোলাম কিবরিয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক
Resources:
+1
+1
2
+1
+1
1
+1
+1
+1