মহাবিশ্বের ৮৫% বস্তুই ডার্ক ম্যাটারের তৈরি। এটি এমন এক কণা দ্বারা গঠিত যা আলো শোষণ করে এবং ডার্ক ম্যাটার-এর মধ্যে আলোর কোনো প্রতিফলন হয় না। ডার্ক ম্যাটারকে সরাসরি দেখা যায় না, এমনকি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করেও তাদের শনাক্ত করা যায় না। এদের Gravitational Lensing ব্যবহার করে শনাক্ত করা হয়। এবার বিজ্ঞানীরা তাদের পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে প্রাচীনতম ডার্ক ম্যাটারের সন্ধান পেয়েছে, যে আবিষ্কার আমাদের মহাবিশ্বের পূর্বপ্রচলিত সকল ধারণাকে বদলে দিতে পারে!
এর পূর্বে যে ডার্ক ম্যাটার পাওয়া গিয়েছিল তা ১০ বিলিয়ন বছরের পুরাতন ছিল। কিন্তু এবার যেটা পাওয়া গিয়েছে সেটি ১২ বিলিয়ন বছরেরও পুরাতন! এর খোঁজ পেয়েছেন জাপানের নাগোয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। তাদের এই অনুসন্ধান ফিজিকাল রিভিউ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গবেষণাপত্র মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু উত্তেজনাপূর্ণ উত্তর দিয়েছে।
ডার্ক ম্যাটার শনাক্তকরণ:
আমরা ইতোমধ্যে জানলাম Gravitational Lensing ব্যবহার করে ডার্ক ম্যাটার শনাক্ত করা যায়। এই লেন্স ব্যবহার করা হয় মহাবিশ্বের বিশাল দূরত্ব পরিমাপের জন্য। গ্যালাক্সির মত বিশাল ভরের মহাকর্ষ টানের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এই লেন্সের কার্য সম্পাদন করা হয়। এই লেন্স ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সির ভিতর দিয়ে দেখতে পারেন। পুরোনো ছায়াপথগুলির আলোও এটির সাহায্যে দেখা যায়। ডার্ক ম্যাটার এখানে মহাকর্ষের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। ফলে আলোর বিকৃতি হয়। কোনো গ্যালাক্সিতে এই ডার্ক ম্যাটার যত বেশি থাকে, বিকৃতি তত বেশি হয়। আর এই বিকৃতিই বিজ্ঞানীরা পরিমাপ করতে পারেন।
তবে বর্তমানের পর্যবেক্ষকগুলো যেমন লেন্স, টেলিস্কোপ, স্যাটেলাইট ইত্যাদি ১০ বিলিয়ন বছর পিছনে দেখতে স্বচ্ছ নয় (গবেষণাটি যখন শুরু করা হয়েছিল তখন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাকাশে ছিল না। ওয়েবের জন্য সামনে আমরা আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাবো আশা করা যায়। তখন হয়তো এই গবেষণা আরো এক ধাপ উন্নীত হবে)। তাই সঠিক ফলাফলের জন্য বিজ্ঞানীরা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি) এর সাহায্য নেন।
ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির সিএমবি-পর্যবেক্ষক প্ল্যাঙ্ক স্যাটেলাইট ব্যবহার করে বিজ্ঞানীদের দল ১.৫ মিলিয়ন গ্যালাক্সির বিকৃতি পর্যবেক্ষণ করেন। সেটি পরিমাপ ও হিসাব-নিকাশ করে জানা যায়, এই বিকৃতির জন্য যে এই প্রাচীনতম ডার্ক ম্যাটারটিই দায়ী, এবং তা বিগ ব্যাং এর ১.৭ বিলিয়ন বছর পর গঠিত হয়েছিল। এই ডার্ক ম্যাটারটিকে পূর্বে করা ভবিষ্যৎবাণী ল্যাম্বডা কোল্ড ডার্ক ম্যাটার (ল্যাম্বডা-সিডিএম) এর ন্যায় ভাবা হয়েছিল। সিডিএম একটি মহাজাগতিক মডেল যার কারণেই বিগ ব্যাং এর পর মহাবিশ্ব শীতল হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই সিডিএমের গুচ্ছের মধ্যেই গ্যালাক্সির উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা যায়, যে ডার্ক ম্যাটার খুজে পাওয়া গিয়েছিল, সেটি সিডিএম নয়।
তবে বিজ্ঞানীদের দলটি জানিয়েছেন, তাদের সিদ্ধান্তগুলি নিশ্চিত করার জন্য আরও অনেক কাজ করা দরকার।
গবেষণার প্রধান হিরানো মায়াতাকে জানান,
“আমাদের অনুসন্ধান এখনও অনিশ্চিত। তবে যদি এটা সঠিক হয়, পূর্বের মডেলগুলো বাতিল বলে গণ্য হবে।”
ডার্ক ম্যাটার রহস্য মহাকাশবিজ্ঞানের অন্যতম অমিমাংসিত রহস্য। বিস্তর গবেষণার অংশ এটি। হয়তো আমাদের মহাবিশ্বের আসল ইতিহাস এই ডার্ক ম্যাটারেই লুকানো!
তানভীর আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ফিউচারিজম