কম্পিউটার বলা যায় এখন নিত্য ব্যবহার্য একটা ডিভাইস। বর্তমান সময়ে হাতের মুঠোয় চলে আসা এই কম্পিউটারের প্রাচীন রূপ কেমন ছিলো? এনিয়াক আবিষ্কারেরও আগে, কেমন ছিলো এই গণনা যন্ত্র? এই কৌতূহল মেটাতেই, ১৯০১ সালে রোমান যুগের একটি জাহাজ থেকে একটি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। ২০০০ বছর পুরোনো হাতে চালিত এ ডিভাইসটিকে কেউ কেউ বিশ্বের প্রাচীনতম কম্পিউটার হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।
উদ্ধারকৃত অংশগুলো দিয়ে ডিভাইসটিকে সম্পূর্ণ করতে গিয়ে দেখা যায়, ডিভাইসের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ উদ্ধার করা হয়েছে। আদিমতম এই যন্ত্রটির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা এর সম্পূর্ণ কার্যক্রম ও কার্যপদ্ধতি উদ্ধারের আশা বৃথা। পুরো যন্ত্রের পেছনের অংশগুলোর কাজ বিভিন্ন গবেষণা করে সমাধান হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু সামনের দিকের যন্ত্রাংশ সমূহ, বিশেষ করে গিয়ারিং সিস্টেমের কাজ রহস্যই থেকে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা তখনকার মতো যন্ত্রটির রহস্য সমাধানের আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডিভাইসটির কার্যপদ্ধতি নিয়ে বোমা ফাটিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এর বিজ্ঞানীরা। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকেরা জানান, তারা 3D কম্পিউটার মডেলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধাঁধাঁটি ভাঙতে সক্ষম হয়েছেন। তারা খুঁজে না পাওয়া সামনের অংশটি পুনরায় তৈরি করেছেন এবং আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করে ডিভাইসটির সম্পূর্ণ প্রতিরূপ তৈরি করার ব্যাপারে আশাবাদী। এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রগুলোতে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গিয়ারিং সিস্টেমের সূক্ষ্ম ও জটিল অংশগুলো দেখানো হয়েছে। গবেষণাপত্রের প্রধান টনি ফ্লিথ বলেন, “আমাদের তৈরিকৃত মডেল সমস্ত শারীরিক প্রমাণের সাথে মিলে যায়। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে খোদাইকৃত বৈজ্ঞানিক শিলালিপির সাথেও মিলে যায়।”
জ্যোতির্বিদ্যায় ক্যালকুলেটর হিসেবে কাজ করা এই যন্ত্রটিকে বিশ্বের প্রাচীনতম অ্যানালগ কম্পিউটার বলে বর্ণনা করা হয়েছে। গাঠনিক দিক থেকে এটি তামার তৈরি এবং এতে কয়েক ডজন গিয়ার রয়েছে। এর পেছনের অংশটিতে মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ডিভাইসটি পাঁচটি গ্রহের গতি নিপুণভাবে প্রদর্শন করতে পারে। ঐ গ্রহগুলোর গতি কেমন, তা ডিভাইস তৈরির সময়কালে জানা ছিল। ডিভাইসটির মোট ৮২ টি টুকরো পাওয়া গিয়েছিল, যা একত্রিত করে সম্পূর্ণ ডিভাইসের এক-তৃতীয়াংশ গাঠনিক রূপ দেয়া সম্ভব হয়েছে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা এক্স-রে ডাটা এবং গ্রীক গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পুরো ডিভাইসের মডেল দাঁড় করান।
মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথসূত্র : BBC