এই প্রথম কেউ পানির নিচের সম্পূর্ণ তারবিহীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পেরেছে। আর এজন্য সম্পূর্ণ ধন্যবাদ এলইডি এবং লেজার কে।
আপনি ভাবতে পারেন! আপনি সবকিছু লাইভ স্ট্রিম এর মাধ্যমে দেখতে পারছেন হোক সেটা ঐতিহাসিক নভোচারী প্রত্যাবর্তন, স্ট্রবেরি মুন দেখতে পাওয়া, নতুন কোন ভিডিও গেম এর প্রকাশ ইত্যাদি। এটি আমাদেরকে সহজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিয়েল-টাইমে সব কিছু দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। তবুও একটি সমুদ্রের গভীরে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যা আমরা এখনও পার করতে পারিনি। কারণ পানির নিচে যোগাযোগ স্থাপন আকাশ বা মহাকাশের মতো ততটা সহজ নয়।
একটি নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে যে, এক ধরনের জলজ ইন্টারনেট হালকা বীমের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণ করতে পারে যাতে ডুবুরিদের তাৎক্ষণিকভাবে ধারণকৃত সমুদ্রের তলদেশের ফুটেজগুলো উপরিভাগ পৃষ্ঠে প্রেরণ করতে পারে।
সমুদ্র তলদেশে সংযোগ স্থাপনে যে সমস্যাগুলো হয়ঃ
বর্তমানে আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নতির এই সময়ে হ্যান্ড সিগনাল, রেডিও, ডিজিটাল লাইট সংকেত ইত্যাদির বিভিন্ন ব্যবহার হচ্ছে। যদিও এগুলো মোটামুটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তবুও এদের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
শাব্দিক সংকেতগুলো দীর্ঘ দূরত্বে যেতে পারে তাও খুব সীমিত ডাটা রেটসহ। দৃশ্যমান আলো ও দীর্ঘ দূরত্ব যেতে পারে এবং প্রচুর ডাটা বহন করতে পারে। তবে সমস্যা হল এর সংকীর্ণ আলোর জন্য ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার গুলোর মধ্যে একটি সুন্দর পরিষ্কার সংযোগ বা লাইন প্রয়োজন। যেখানে সমুদ্র তলদেশে শুধুমাত্র কম দূরত্বে ডাটা বহন করা যায়। আর সমুদ্রতলদেশে সহজে ভিডিও স্ট্রিমিং করাও এতটা সহজ নয়।
এটা দুঃখজনক কারণ ভিডিও স্ট্রিমিং আমাদেরকে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য অনেক বিশাল সুযোগ তৈরি করে। লেখক বাসিম শিহদা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যা করেন- “একাডেমিয়া এবং শিল্প উভয়ের লোকেরাই পানির নিচের পরিবেশকে বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ও অন্বেষণ করতে চান।”
পানিতে নিমজ্জিত ওয়াইফাই
এই সমস্যার সমাধানে সহায়তা করার জন্য সৌদি আরবের কিং আব্দুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি দল আন্ডারওয়াটার ওয়্যারলেস সিস্টেম তৈরি করেছে যা তারা অ্যাকুয়া-ফাই নাম দিয়েছে।
আসলে, অ্যাকুয়া-ফাই রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে প্রেরকের স্মার্টফোন থেকে ডাটা গেটওয়ে ডিভাইস যা তাদের গিয়ারে যুক্ত থাকে সেখানে প্রেরণ হয়। ঠিক একই পদ্ধতিতে ওয়াইফাই বুস্টার কাজ করে। গেটওয়েটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত কম্পিউটারে ডাটা প্রেরণ করে।
যে সব বাধা অতিক্রম করতে হবে
এই পরীক্ষাটি করার সময় টিমটি প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ২.১১ মেগাবাইট ডাটা স্থানান্তর গতি এবং একটি সার্কেল ঘুরে আসতে গড়ে ১.০০ মিলিসেকেন্ডের কম সময় নেয়ার রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছিল। শিহদা বলেছেন- “এই প্রথমবারের মতো কেউ সমুদ্র তলদেশে পুরোপুরি তারবিহীন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।”
এটি অনেক চিত্তাকর্ষক হলেও গবেষকদের এখনো বেশ কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হবে। শিহদা বলেন- “আমরা আশা করি দ্রুত ইলেকট্রনিক উপাদানগুলোর সাথে লিংক বা সংযোগের গুণগতমান ও এবং ট্রান্সমিশনের পরিসরের উন্নয়ন করতে পারবো।”
এছাড়াও আলোর বীমটি-কে পানির মধ্যে থাকা রিসিভারটির সাথে পুরোপুরি সংযুক্ত থাকতে হবে। তাই টিমটি এমন একটি গোলাকার রিসিভার সম্পর্কে ভেবেছে যে সমস্ত কোন থেকে আলো ক্যাপচার করতে পারে।
শিহদা আরও বলেন, “আমরা পানির তলদেশের পরিবেশকে বৈশ্বিক ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করার জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ উপায়ে তৈরি করছি। আমরা আশা করি যে, একদিন অ্যাকুয়া-ফাই পানির উপরে যেমন ওয়াই-ফাই রয়েছে তেমনি ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।”
পানির নিচে যদি 5G ওয়াইফাই দেখতে পাওয়া যায় ভবিষ্যতে তা আসলেই একটি সফলতার গল্পের সৃষ্টি করবে।
রাদিয়া আহমেদ লুবনা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1
+1