সাধারণত পুড়ে যাওয়া মানুষের ক্ষত নিরাময়ে ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করা হয়। অনেক আগে থেকেই পোড়ার চিকিৎসায় এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা সম্ভবত ব্যান্ডেজ-এর বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন।
ইসরাইল ও ইউরোপের চিকিৎসকেরা দীর্ঘস্থায়ী ও অস্ত্রোপচার করতে হবে এমন পুড়ে যাওয়া ত্বকের ক্ষত সারাতে নতুন অগ্রগতি সামনে এনেছেন। ইসরাইলী সংস্থা ন্যানোমেডিক ‘স্পিনকেয়ার পোর্টাবেল‘ নামক একটি মেডিকেল বন্দুক উদ্ভাবন করেছেন। সুপারহিরো স্পাইডারম্যান যেমন জাল ছড়িয়ে কোন বস্তুকে আটকে ফেলে, নতুন উদ্ভাবিত এ বন্দুক বুলেটের পরিবর্তে লক্ষ্যস্থানে জাল নিক্ষেপ করে লক্ষ্যস্থল ঢেকে ফেলবে। এতে ক্ষতস্থানের উপর কৃত্রিম ত্বকের মতো আরো একটি নতুন স্তর তৈরি হবে। বাইরের যে কোন তাপ, চাপ, আঘাত থেকে সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত এ স্তরটি।
রোগীদের পোড়া শরীরে যে ব্যান্ডেজ করা হয় তা খুবই কষ্টদায়ক। ব্যান্ডেজ নিয়ে চলাফেরা করা দুঃসহ। এসময় গোসল করা যায় না। মেডিকেল বন্দুকের এই কৃত্রিম ত্বক ব্যান্ডেজ-এর বিকল্প হয়ে রোগীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে, গোসলের সুযোগ দিবে। বন্দুকে শ্যুট করার পর একটি স্বচ্ছ স্তর তৈরি হবে ফলে ক্ষতস্থান স্পর্শ না করেই এর অবস্থা বোঝা যাবে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা নিরীক্ষাও করা যাবে। এতে যেমন সংক্রমনের ঝুঁকি কমবে তেমনি বারবার ব্যান্ডেজ খোলা ও বন্ধ করার ঝামেলাও দূর হবে। এর উপর সহজেই পোশাক পরা যাবে।
স্পিনকেয়ার নামক মেডিকেল বন্দুকের এই ডিভাইস তৈরি করতে ‘ইলেক্ট্রোস্পিনিং‘ নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় দ্রবণ থেকে বিদ্যুতের সাহায্যে ন্যানোফাইবার প্রস্তুত করা হয়। অতি সূক্ষ্ম ফাইবারগুলো একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে কৃত্রিম ত্বকের মতো কাজ করে এবং ক্ষতস্থান বন্ধ করে দেয়। তবে নিরাময় প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য ক্ষতের উপর ঘামের অনুভূতি দিতে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইলেক্ট্রোস্পিনিং নামক এই পদ্ধতি চিকিৎসাবিজ্ঞানের বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে আগের যে কোনটির চেয়ে স্পিনকেয়ারের এ ডিভাইসটি বেশি ছোট ও গতিশীল। বলে রাখা ভালো, এটিতে আগের বিশাল বড়সড় যন্ত্রের কোনো ঝামেলা নেই! আর গবেষকরা জানিয়েছেন, পোড়া ক্ষত ছাড়াও অন্যান্য ক্ষততেও এটি ব্যবহার করা যাবে।
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ন্যনোমেডিক এর বিপণন ভাইস চেয়ারম্যান গ্যারি জে দেগিভ বলেন, “এর দাম দেশ ও অঞ্চলভেদে আলাদা হতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত যে কোন উন্নত ড্রেসিংএর তুলনায় আমাদেরটি সাশ্রয়ী।” তিনি জানান ইতোমধ্যে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড এর হাসপাতালে মুখের পোড়ায় ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক বালজিৎ দিহানসা জানিয়েছেন, তিনি সাসেক্সের পাঁচজন রোগীর উপর স্পিনকেয়ার প্রয়োগ করে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন।
আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে বার্ন ইউনিটে রোগীদের কষ্ট অনেকাংশে দূর করতে সাহায্য করবে নতুন এ প্রযুক্তি। এটি বেশ নমনীয় ও সহজে ব্যবহারযোগ্য যা রোগী ও তার স্বজনদের জন্য সুখবর।
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান, ন্যানোমেডীক
+1
+1
+1
+1
3
+1
+1
+1