পুরোনো দিনের রক ব্যান্ড মিউজিক প্রেমীদের কাছে ১৯৬৫ সালে লন্ডনে গঠিত পিঙ্ক ফ্লয়েড একটি জনপ্রিয় ব্যান্ড। এই ব্যান্ডের প্রতিটি গানই এর দার্শনিক লিরিক্সের জন্য জনপ্রিয়। কিন্তু পুরোনো দিনের এই পিঙ্ক ফ্লয়েড এর সলো শ্রোতার মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত ইলেকট্রনিক সিগন্যাল থেকে পুনর্নির্মাণ করা যাবে এমনটাই বা ভেবেছিলেন কয়জনে!
সম্প্রতি একদল স্নায়ুবিজ্ঞানী ১৯৭৯ সালে রিলিজ হওয়া পিঙ্ক ফ্লয়েড এর সলো Another Brick In the Wall; Part 1 এর পুনর্নির্মাণ করেছেন শ্রোতার মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত ইলেকট্রনিক সিগন্যাল থেকে।
গবেষকরা আশা করছেন Brain Implants (মস্তিষ্ক পড়তে সক্ষম গেজেটস যা স্পর্শ, নড়াচড়া, কথা ইত্যাদি বুঝতে সক্ষম) যন্ত্রাংশ একদিন ওইসব মানুষদের সাহায্য করবে যারা কোনো কারণে তাদের কথা বলার সক্ষমতা হারিয়েছেন।
এই প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত বৈদ্যুতিক সংকেতকে ডিকোড করা সম্ভব। ফলে যেসব মানুষ তাদের কথা বলার সক্ষমতা হারিয়েছেন তারা কথা তো বলতে পারবেন-ই পাশাপাশি গানও গাইতে পারবেন।
পিঙ্ক ফ্লয়েড এর গানটিকে কিভাবে পুনর্নির্মাণ করা হলো?
গবেষকরা মৃগী রোগে আক্রান্ত ২৯ জন ব্যক্তির উপর করা একটি পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন। পরিক্ষাটিতে রোগীদের মস্তিষ্কের পৃষ্ঠে পোস্ট-স্ট্যাম্প আকারের ইলেকট্রোড সংযুক্ত করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের পিঙ্ক ফ্লয়েড এর “Another Brick In the Wall ; Part 1” শুনতে দেওয়া হয়েছিল।
শ্রবণকালে মস্তিষ্কে স্থাপিত ইলেকট্রোডগুলো সুর, তাল, ছন্দ ও লিরিক্সের মতো সংগীত উপাদানগুলোর প্রভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে হওয়া বৈদ্যুতিক কার্যকলাপগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছিলো।
গবেষকরা মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা যা শুনেছিলেন তার অডিও পুনর্গঠন করেছেন।স্নায়ুগবেষকরা মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের ডাটাকে মিউজিকে পরিণত করার উদ্দেশ্যে রোগীদের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেলকে স্থাপন করেছিলেন। যা অংশগ্রহণকারীদের সাথে সংযুক্ত হাজার হাজার ইলেকট্রোড থেকে সংগ্রহকৃত ডাটার সংকেতলিপির অর্থ উদ্ধার করতে সক্ষম।
কেন পিঙ্ক ফ্লয়েড এবং বিশেষভাবে ‘Another Brick In the Wall; Part 1’ গানটিকেই বেছে নেওয়া হলো?
এই প্রশ্নের উত্তরে দলটির অন্যতম প্রধান সদস্য স্নায়ুবিজ্ঞানী Ludovic Bellier বলেন,
“এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা হলো, গানটি খুবই স্তরযুক্ত। এটি জটিল কর্ড, বিভিন্ন ব্যতিক্রমী মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট ও বিচিত্র ছন্দ ধারণ করে যা গানটিকে বিশ্লেষণ করাটাকে খুব-ই আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আবার অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, আমরা সত্যিই পিঙ্ক ফ্লয়েড কে পছন্দ করি।”
এ-আই মডেলটি গানের ধ্বনিতাত্ত্বিক (ACOUSTIC) প্রোফাইলের বিভিন্ন উপাদান, পিচ, তাল এবং সুরের পরিবর্তনগুলোকে বিশ্লেষণ করে আলাদা করেছে।
অন্যদিকে আরেকটি এ-আই মডেল রোগীদের শোনা শব্দ অনুমান করার জন্য এই বিচ্ছিন্ন, বিকৃত শব্দগুলোকে একত্রিত করেছে। একত্রিত শব্দগুচ্ছ থেকে এই ফলাফল আসে যে, এর সুর মোটামুটি অক্ষত ছিল, যদিও গানটি বিকৃত ছিলো। কিন্তু সাধারণ একজন শ্রোতা যে কিনা মূল গানটির সাথে পরিচিত সে একবার শুনেই বলে দিতে পারবে যে, ‘আরে এটি তো Another Brick in the wall!’
যদিও গবেষণাটি সঙ্গীতের উপর দৃষ্টি রেখে করা হয়েছে তবে গবেষকেরা আশা করছেন যে, তাদের পরীক্ষার ফলাফলগুলো মানুষের কথা বলার সময় মস্তিষ্কের তরঙ্গ অনুবাদ করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর হবে। এতে করে যারা স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতের মতো অবস্থার কারণে কথা বলার সক্ষমতা হারিয়েছেন তাদের কথা বলা বা যোগাযোগে এটি সাহায্য করতে পারবে। যদিও প্রযুক্তিটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
শারদ রায় / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান