নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার- যা পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ধরনের রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা যা একজন মানুষের মাঝে নিজের সম্পর্কে অন্যরকম চিন্তাভাবনার সৃষ্টি করে।
নিজেকে সবসময় অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া, নিজের সব চিন্তা-ধারণা কে প্রাধান্য দেয়া নিজেকে সবার থেকে বেশি যোগ্য মনে করা, নিজেকে অতিরিক্ত ভালোবাসা এ সবই এ রোগের লক্ষণ।
একজন নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ব্যক্তির জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন- সম্পর্ক, কর্মক্ষেত্র, স্কুল বা আর্থিক বিষয় ইত্যাদিতে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করে। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত বিশেষভাবে হতাশ হয়ে পড়ে যখন তাদের বিশেষ প্রশংসা বা প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয় না কিন্তু তারা বিশ্বাস করেন যে তারা সেগুলোর প্রাপ্য। তারা তাদের সম্পর্কগুলোতে পূর্ণতা প্রদান করতে পারে না এবং আশেপাশের আনন্দকে ঠিকমতো উপভোগ করতেও পারে না।
তবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহজে আপনি চিহ্নিত করতে পারবেন না। অনেক সময় দেখা যায় আপনার অনেক পরিচিত কোনো ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত অথচ আপনারা তা বুঝতে পারলেন না বরং তাকে সাহায্য করার পরিবর্তে দূরে সরিয়ে দিলেন।
এ রোগের মূল কারণ হিসেবে যেগুলো ধারণা করা হয়ঃ
১. পরিবেশঃ বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সুসম্পর্ক বজায় না থাকা। অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত সমালোচনা বা অন্য কারো সাথে সন্তানের তুলনা করে তারা সন্তানের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করে ফেলে।
২. জেনেটিক্সঃ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য।
৩. নিউরোবায়োলজিঃ মস্তিষ্ক, আচরণ এবং চিন্তা-ভাবনার মধ্যে সংযোগ।
এছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আশেপাশের মানুষের সমালোচনা, মানুষের দ্বারা ব্যঙ্গ বা হাস্যরসের পাত্র হলে, হয়রানির শিকার, অবজ্ঞা বা অবহেলা ইত্যাদির কারণেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের পরিমাণ বাড়ছে বৈ- কমছে না। অতিরিক্ত সেলফি তোলার প্রবণতা, টিকটক ট্রেন্ড ফলো করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে বিশেষ ভাবে উপস্থাপন, এগুলোকে ও কিন্তু এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে বলা যায়। কারণ তারা এর মাধ্যমে নিজেকে অন্যদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় উপস্থাপন করতে চায় এবং অনেক বেশি প্রাধান্য পেতে চায়।
কিন্তু যখন তারা সেখানে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য দেখতে পায় তখন তা মেনে নিতে পারে না। তারা তখন আক্রমনাত্মক হয়ে পড়ে অথবা ডিপ্রেশনে চলে যায়। এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের ডিপ্রেশনের পড়ার প্রবণতা খুব বেশি থাকে। এর কারণে তারা আত্মহত্যা বা নেশাদ্রব্য গ্রহণের মতো ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে।
যেভাবে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারেঃ
যেহেতু এই রোগের মূল কারণটি এখন পর্যন্ত অজানা তাই এটি রোধ করার কোনো সঠিক উপায় নেই। তবে কিছু পদক্ষেপ এটিকে রোধ করতে সহায়তা করতে পারে-
১. শৈশব বা কৈশোরকালীন মানসিক সমস্যার জন্য দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
২. মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কৌশল শিখতে পরিবারের সাথে সুন্দর সম্পর্ক ও যোগাযোগের মাধ্যম বৃদ্ধি করতে হবে। যেটিকে ফ্যামেলি থেরাপি ও বলা হয়ে থাকে।
৩. প্যারেন্টিং ক্লাসে যোগদান, থেরাপিস্ট বা সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া।
পরিশেষে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। নিজেকে অবশ্যই ভালোবাসুন কিন্তু তা করতে গিয়ে আশেপাশের মানুষকে কষ্ট দেয়া বা পরিবেশ নষ্ট করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রাদিয়া আহমেদ লুবনা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
+1
+1
2
+1
+1
+1
2