পাকা চুল উঠা ও পড়ে যাওয়া এবং নতুন চুল গজানোটা দোষের কিছু না। কিন্তু আমরা আতঙ্কিত থাকি এই ভেবে যে, চুল ছিঁড়লে বা পড়লে প্রতিশোধ নিতে সেই জায়গায় আরও দশটি চুল উঠবে।
একদিন সকালে আয়নাতে মৌশি নিজের ঘন কালো চুলের মাঝখানে কিছু ধূসর পাকাচুল আবিষ্কার করল। হঠাৎ আঁতকে উঠে সে যেই না সেগুলো কে ছিঁড়তে যাবে, তখনি পাশ থেকে তার বড় বোন বলে উঠলো, সেই পাকা চুল থেকে একটি চুলও ছিঁড়লে একইস্থানে দ্বিগুণ পরিমাণ পাকাচুল গজাবে। অতি প্রাচীনকাল হতে খুব প্রচলিত একটি ধারণা এটি। আপনিও কী এতে বিশ্বাসী? চলুন জেনে আসি, ধারণাটি ঠিক কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং এর পেছনে বিজ্ঞান কি বলে?
কী এই কেরাটিন (Keratin)?
কেরাটিন নামক শক্ত প্রোটিন দিয়ে চুল তৈরি হয়। একটি চুলের ফলিকল প্রতিটি চুলকে ত্বকের সঙ্গে আটকে রাখে। চুলে অবস্থিত বাল্ব ফলিকলের গোড়া তৈরি করে এবং রক্তনালীগুলো চুলের বাল্বের কোষগুলিকে পুষ্ট করতে সাহায্য করে এবং হরমোন সরবরাহ করে যা জীবনের বিভিন্ন সময়ে চুলের বৃদ্ধি এবং গঠন পরিবর্তন করে।
সাধারণত এক ধরনের মেলানিনের প্রাচুর্য, যার নাম ইউমেলানিন(Eumelanin) এর কারণে মানুষের চুল কালো বা বাদামী দেখায়। ফিওমেলানিন (Pheomelanin) নামক আরেকটি পিগমেন্টের প্রাচুর্য মানুষকে লাল চুল দেয়।
আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চুলের ফলিকলের পিগমেন্ট কোষগুলি ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকে। যখন একটি চুলের ফলিকলে কম রঞ্জক কোষ থাকে, তখন চুলের সেই তন্তুতে আর বেশি মেলানিন থাকে না এবং এটি বৃদ্ধির সাথে সাথে- ধূসর, রূপালী বা সাদা -এর মতো আরও স্বচ্ছ রঙে পরিণত হয়। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেলানিন উৎপাদনের জন্য কম পিগমেন্ট কোষ থাকবে। অবশেষে, চুল সম্পূর্ণ ধূসর দেখাবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তবে কেনো খুব অল্প বয়সে চুল পেকে যায়?
১.জেনেটিক বৈশিষ্ট্য:
আপনার বয়স ২০ এর প্রথম দিকে হলে ধূসর চুল হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে একটি হল আপনার জিন।
২. খাদ্যতালিকাগত ঘাটতি:
ভিটামিন বি, জিঙ্ক এবং কপারের ঘাটতির কারণেও চুলের রং ধূসর হয়ে যায়। খাদ্যতালিকায় তাই সকল খাবারের বা পুষ্টিমানের সঠিকভাবে সঠিক পরিমাণে থাকা প্রয়োজন।
৩.পরিবেশ দূষণ:
আমরা প্রতিদিন যে দূষণের মুখোমুখি হই তা আমাদের চুলের তন্তুগুলোকে দুর্বল করে তোলে; সময়ের সাথে সাথে এটিও ধূসর চুলের দিকে নিয়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রেস এবং উদ্বেগ চুলের অকাল পাকা হওয়ার প্রধান কারণ; কেমোথেরাপির মতো মানসিক চাপের কারণে আপনি যে চুল হারান তা আবার ধূসর হয়ে যেতে পারে।
অর্থাৎ, একটি ধূসর চুল ছিঁড়লে সেই জায়গায় দ্বিগুণ পরিমাণ ধূসর চুল গজাবে এটি কেবলই একটি ভ্রান্ত ধারণা। সুতরাং, আপনি একটি চুল ছিঁড়লে প্রতিশোধ নিতে সেই জায়গায় আরও দশটি চুল উঠবে এমনটি ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।
UAMS পরিবার এবং প্রতিরোধমূলক ওষুধের চিকিৎসক ড. শাসকাঙ্ক ক্রালেটি এই প্রচলিত ধারণার পিছনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন:
“একটি ধূসর চুল তুললে আপনি কেবল তার জায়গায় একটি নতুন ধূসর চুল পাবেন কারণ প্রতি ফলিকলে শুধুমাত্র একটি চুলই বাড়তে সক্ষম। আপনার আশেপাশের চুলগুলি সাদা হবে না যতক্ষণ না তাদের নিজস্ব ফলিকলের পিগমেন্ট কোষগুলি মারা যায়।”
গবেষক ডঃ ক্রালেটি ব্যাখ্যা করেন-
“আপনি যখন একটি চুল তুলবেন তখন তার জায়গায় একটি নতুন গজাবে এবং যেহেতু পিগমেন্ট কোষগুলি আর রঙ্গক তৈরি করছে না; এই নতুন চুলটিও সাদা হবে।”
এর মানে কি এই যে আপনার সেই ধূসর চুলগুলো ছেঁটে ফেলা উচিত? -না, ডাঃ ক্রালেটি চুল উপড়ে বা টেনে বের করার পরামর্শ দেন না।
“যদি একটি ধূসর চুল থাকে তবে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য খুব সাবধানে এটি কেটে ফেলুন। প্লাকিং বা উপড়ে ফেলা চুলের ফলিকলকে আঘাত করতে পারে এবং যেকোনো ফলিকলে বারবার আঘাতের ফলে সংক্রমণ হতে পারে; দাগ তৈরি হতে পারে বা সম্ভবত টাকের ছোপ পড়তে পারে।”
অর্থাৎ এ বিষয়ে আতঙ্কিত হবার কোনো প্রয়োজন নেই, এবং যুক্তিযুক্তভাবে বিজ্ঞান এ ধরনের প্রচলিত মিথকে কখনোই সমর্থন করেনা।