সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ তার প্রয়োজনে করেছে নানা উদ্ভাবন। বিদ্যুৎ শক্তি এমনই এক আবিষ্কার যা মানুষের উন্নয়নকে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা। বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের অনেক উৎস আছে যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাসায়নিক শক্তি। রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি সহজ উপায় হলো তড়িৎ রাসায়নিক কোষ। সম্প্রতি অধিক কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যে তড়িৎ কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ রাসায়নিক বিক্রিয়ার শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় তাকে তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বলে।
নানা ধরনের তড়িৎ রাসায়নিক কোষ রয়েছে যেমন: লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, নিকেল মেটাল হাইড্রাইড ইত্যাদি। তবে এই কথা সত্য তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারির ব্যবহার যেমন প্রযুক্তিকে করেছে ত্বরান্বিত তেমনি পরিবেশের জন্য এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যেমন: লেড, ক্যাডমিয়াম, মারকিউরির মত পদার্থ রিসাইকেল করা যায় না, তাই ব্যাটারীতে এর ব্যবহারের ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার ইউনিভার্সিটি এবং চীনের ঝেজিয়াং সাই-টেক ইউনিভার্সিটি গবেষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে বিশ্বের প্রথম Aqueous aluminium radical battery (জলীয় অ্যালুমিনিয়াম র্যাডিকেল ব্যাটারি) যাতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পদার্থের পরিবর্তে ওয়াটার বেইজড ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ব্যাটারতে একটি বিশেষ ধরনের মূলক বা রেডিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে যাতে আছে TEMPO (2,2,6,6-tetramethylpiperidyl-1-oxy) নামের একটি উপাদান।
রসায়নে র্যাডিক্যাল বা ফ্রি র্যাডিক্যাল (মুক্ত মুলক) বলতে বোঝায়, এমন একটি পরমাণু, অণু বা আয়ন যার অন্তত একটি কিংবা একাধিক জোড়াহীন ইলেকট্রন রয়েছে। এরা খুব দ্রুত বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নতুন ধরনের পদার্থ কিংবা যৌগ তৈরি করে। অন্যদিকে স্টেবল র্যাডিক্যাল বা স্থিতিশীল মুক্ত মূলক হলো তুলনামূলক কম প্রতিক্রিয়াশীল মুক্ত মূলক যা সহজে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে TEMPO যা একটা স্ট্যাবল র্যাডিক্যাল হওয়া সত্ত্বেও Lewis acid এর উপস্থিতিতে reversible disproportionation প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। reversible dispropersonation হলো এক ধরনের বিশেষ বিক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি পদার্থের উচ্চ এবং নিম্ন জারণ অবস্থার উৎপন্ন করা সম্ভব।
ফ্লিন্ডার ইউনিভার্সিটি এর প্রফেসর ঝংফান জিয়া এর মতে,
বেশিরভাগ ব্যাটারিতে বিপজ্জনক পদার্থ থাকে যা যেখানে সেখানে ফেলে দিলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্যাডমিয়াম এবং পারদ এর মত উপাদান মানুষ এবং প্রাণীর জন্য বিষাক্ত।
ব্যাটারি চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ওয়াটার বেইজড ইলেক্ট্রোলাইট বা পানিতে মিশ্রিত তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ। তড়িৎ বিশ্লেষ্য হচ্ছে এমন একটি পদার্থ যা কোন পোলার দ্রাবকে (যেমন- পানি) দ্রবীভূত করলে তড়িৎ-পরিবাহী দ্রবণ তৈরি করে। যেমন বিভিন্ন রকমের লবণ এবং খনিজ পদার্থ। ফলে এই ব্যাটারি হয়েছে অধিক পরিমাণে পরিবেশ বান্ধব।
প্রফেসর জিয়া এর মতে অ্যালুমিনিয়াম-আয়ন ব্যাটারি যেকোনো ক্ষেত্রে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চেয়ে অধিক কার্যকর হবে। কেননা লিথিয়াম ব্যাটারি যেখানে Li+ আয়ন উৎপন্ন করে অ্যালুমিনিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সেখানে Al3+ আয়ন উৎপন্ন করে। বৈদ্যুতিক পণ্য, যানবাহনে ব্যবহারের পাশাপাশি এবং শক্তি সংরক্ষণেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তার ব্যাখ্যা অনুসারে, অ্যালুমিনিয়াম আয়ন ব্যাটারির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল Al3+ আয়নের ধীরগতির চলন। এর জন্য অ্যালুমিনিয়াম আয়ন ব্যাটারির একটি বিশেষ ধরনের নকশা তারা প্রণয়ন করেছেন।
Clean Technica এর রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান সময়ে লিথিয়াম এবং ট্রানজিশন মেটাল অক্সাইডের অপ্রতুলতায় অ্যালুমিনিয়াম আয়ন ব্যাটারি তড়িৎ শক্তির একটি ভালো উৎস হতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে এই তড়িৎ কোষ বা পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি হতে পারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটি অভিনব পন্থা।